পারে নাই। পানুবাবুর কাছ হইতেও তো কোনো সাহায্য পাওয়া গেল না। একলা বরদাসুন্দরী সমস্ত গ্রন্থি ছেদন করিয়াছেন। হাঁ! হাঁ! এক জন মেয়েমানুষ যাহা পারে পাঁচ জন পুরুষে তাহা পারে না।
বরদাসুন্দরী বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া শুনিলেন ললিতা আজ সকাল সকাল শুইতে গেছে, তাহার শরীর তেমন ভালো নাই। তিনি মনে মনে হাসিয়া কহিলেন, ‘শরীর ভালো করিয়া দিতেছি।’
একটা বাতি হাতে করিয়া তাহার অন্ধকার শয়নগৃহে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, ললিতা বিছানায় এখনো শোয় নাই একটা কেদারায় হেলান দিয়া পড়িয়া আছে।
ললিতা তৎক্ষণাৎ উঠিয়া বসিয়া জিজ্ঞাসা কহিল, “মা, তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”
তাহার স্বরের মধ্যে একটা তীব্রতা ছিল। সে খবর পাইয়াছিল তিনি সতীশকে লইয়া বিনয়ের বাসায় গিয়াছিলেন।
বরদাসুন্দরী কহিলেন, “আমি বিনয়ের ওখানে গিয়েছিলেম।”
“কেন?”
কেন! বরদাসুন্দরীর মনে মনে একটু রাগ হইল। ‘ললিতা মনে করে আমি কেবল ওর শত্রুতাই করিতেছি! অকৃতজ্ঞ!’
বরদাসুন্দরী কহিলেন, “এই দেখো কেন।” বলিয়া বিনয়ের সেই চিঠিখানা ললিতার চোখের সামনে মেলিয়া ধরিলেন। সে চিঠি পড়িয়া ললিতার মুখ লাল হইয়া উঠিল। বরদাসুন্দরী নিজের কৃতিত্ব-প্রচারের জন্য কিছু অত্যুক্তি করিয়াই জানাইলেন যে, এ চিঠি কি বিনয়ের হাত হইতে সহজে বাহির হইতে পারিত। তিনি জাঁক করিয়া বলিতে পারেন, এ কাজ আর-কোনো লোকেরই সাধ্যের মধ্যেই ছিল না।
ললিতা দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া তাহার কেদারায় শুইয়া পড়িল। বরদাসুন্দরী মনে করিলেন,তাঁহার সম্মুখে প্রবল হৃদয়াবেগ প্রকাশ করিতে ললিতা লজ্জা করিতেছে। ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন।
৪৩৭