পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সম্মতি নেই। কাগজে তো পড়ে দেখেছ! এমন দীক্ষা নেবার দরকার কী?”

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “দীক্ষা না নিলে বিবাহ হবে কী করে?”

 ললিতা কহিল, “কেন হবে না?”

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “হিন্দুমতে হবে নাকি?”

 বিনয় কহিল, “তা হতে পারে। যেটুকু বাধা আছে সে আমি দূর করে দেব।”

 বরদাসুন্দরীর মুখ দিয়া কিছু ক্ষণ কথা বাহির হইল না। তাহার পরে রুদ্ধকণ্ঠে কহিলেন, “বিনয়, যাও, তুমি যাও। এ বাড়িতে তুমি এসে না।”


৬০

গোরা যে আজ আসিবে সুচরিতা তাহা নিশ্চয় জানিত। ভোরবেলা হইতে তাহার বুকের ভিতরটা কাঁপিয়া উঠিতেছিল। সুচরিতার মনে গোরার আগমন-প্রত্যাশার আনন্দের সঙ্গে যেন একটা ভয় জড়িত ছিল। কেননা, গোরা তাহাকে যে দিকে টানিতেছিল এবং আশৈশব তাহার জীবন আপনার শিকড় ও সমস্ত ডালপালা লইয়া যে দিকে বাড়িয়া উঠিয়াছে, দুয়ের মধ্যে পদে পদে সংগ্রাম তাহাকে অস্থির করিয়াছিল।

 তাই, কাল যখন মাসির ঘরে গোরা ঠাকুরকে প্রণাম করিল তখন সুচরিতার মনে যেন ছুরি বিঁধিল। নাহয় গোরা প্রণামই করিল, নাহয় গোরার এইরূপই বিশ্বাস, এ কথা বলিয়া সে কোনোমতেই নিজের মনকে শান্ত করিতে পারিল না।

 গোরার আচরণে যখন সে এমন কিছু দেখে যাহার সঙ্গে তাহার ধর্মবিশ্বাসের মূলগত বিরোধ তখন সুচরিতার মন ভয়ে কাঁপিতে থাকে। ঈশ্বর এ কী লড়াইয়ের মধ্যে তাহাকে ফেলিয়াছেন!

 হরিমোহিনী নব্যমতাভিমানী সুচরিতাকে সুদৃষ্টান্ত দেখাইবার জন্য আজও গোরাকে তাঁহার ঠাকুরঘরে লইয়া গেলেন এবং আজও গোরা

৪৬৪