পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ধরিয়া চলিয়াছি; আমাদের মনে এক মুখে আর নাই; আমাদের দ্বারা আজ এক-রকম কাল অন্যরকম অসম্ভবইহাতে আমাদিগকে মুর্খই বলো, নির্বোধই বলো, আর যাই বলো।’

 গোরা এসব কথায় একটি কথাও যোগ করিল না, স্থির হইয়া বসিয়া রহিল।

 বেলা হইয়া গেলে যখন একে একে সকলে চলিয়া গেল তখন গোরা দেখিল, বিনয় তাহার ঘরে প্রবেশ না করিয়া পাশের সিঁড়ি দিয়া উপরে চলিয়া যাইতেছে। গোরা তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল; ডাকিল, “বিনয়।”

 বিনয় সিঁড়ি হইতে নামিয়া গোরার ঘরে প্রবেশ করিতেই গোরা কহিল, “বিনয়, আমি কি না-জেনে তোমার প্রতি কোনো অন্যায় করেছি, তুমি আমাকে যেন ত্যাগ করেছ বলে মনে হচ্ছে।”

 আজ গোরার সঙ্গে একটা ঝগড়া বাধিবে, এ কথা বিনয় আগেভাগেই স্থির করিয়া মনটাকে কঠিন করিয়াই আসিয়াছিল। এমন সময় বিনয় আসিয়া গোরার মুখ যখন বিমর্ষ দেখিল এবং তাহার কণ্ঠস্বরে একটা স্নেহের বেদনা যখন অনুভব করিল, তখন সে জোর করিয়া মনকে যে বঁধিয়া আসিয়াছিল তাহা এক মুহূর্তেই ছিন্নবিচ্ছিন্ন হইয়া গেল।

 সে বলিয়া উঠিল, “ভাই গোরা, তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটে, অনেক জিনিস ত্যাগ করতে হয়, কিন্তু তাই বলে বন্ধুত্ব কেন ত্যাগ করব!”

 গোরা কিছু ক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, “বিনয়, তুমি কি ব্রাহ্মসমাজে দীক্ষা গ্রহণ করেছ?”

 বিনয় কহিল, “না গোরা, করি নি, এবং করবও না। কিন্তু সেটার উপর আমি কোনো জোর দিতে চাই নে।”

 গোরা কহিল, “তার মানে কী?”

 বিনয় কহিল, “তার মানে এই যে, আমি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নিলুম কি

৪৭৫