পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জবর্দস্তির দ্বারাই মানতে চাও। আমি আজ বলছি, এখানে আমি কারও জোর মানব না। সমাজের দাবিকে আমি তত ক্ষণ পর্যন্ত স্বীকার করব যত ক্ষণ সে আমার উচিত দাবিকে রক্ষা করবে। সে যদি আমাকে মানুষ বলে গণ্য না করে, আমাকে কলের পুতুল করে বানাতে চায়, আমিও তাকে ফুলচন্দন দিয়ে পূজা করব না, লোহার কল বলেই গণ্য করব।”

 গোরা কহিল, “অর্থাৎ, সংক্ষেপে, তুমি ব্রাহ্ম হবে?”

 বিনয় কহিল, “না।”

 গোরা কহিল, “ললিতাকে তুমি বিয়ে করবে?”

 বিনয় কহিল, “হাঁ”

 গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “হিন্দুবিবাহ?”

 বিনয় কহিল, “হাঁ”

 গোরা। পরেশবাবু তাতে সম্মত আছেন?

 বিনয়। এই তাঁর চিঠি।

 গোরা পরেশের চিঠি দুইবার করিয়া পড়িল। তাহার শেষ অংশে ছিল- ‘আমার ভালো মন্দ লাগার কোনো কথা তুলিব না, তোমাদের সুবিধাঅসুবিধার কোনো কথাও পাড়িতে চাই না। আমার মত-বিশ্বাস কী, আমার সমাজ কী, সে তোমরা জান; ললিতা ছেলেবেলা হইতে কী শিক্ষা পাইয়াছে এবং কী সংস্কারের মধ্যে মানুষ হইয়াছে তাহাও তোমাদের অবিদিত নাই। এ-সমস্তই জানিয়া শুনিয়া তোমাদের পথ তোমরা নির্বাচন করিয়া লইয়াছ। আমার আর-কিছুই বলিবার নাই। মনে করিয়ো না, আমি কিছুই না ভাবিয়া অথবা ভাবিয়া না পাইয়া হাল ছাড়িয়া দিয়াছি। আমার যতদুর শক্তি আমি চিন্তা করিয়াছি। ইহা বুঝিয়াছি, তোমাদর মিলনকে বাধা দিবার কোনো ধর্মসংগত কারণ নাই, কেননা তোমার প্রতি আমার সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। এ স্থলে সমাজে যদি কোনো বাধা থাকে তবে তাহাকে স্বীকার করিতে তোমরা বাধ্য নও। আমার কেবল এইটুকুমাত্র বলিবার আছে, সমাজকে যদি তোমরা লঙ্ঘন করিতে চাও তবে সমাজের

৪৭৮