পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৬২

হরিমোহিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, “রাধারানী, কাল রাত্রে তুমি কিছু খেলে কেন?”

 সুচরিতা বিস্মিত হইয়া কহিল, “কেন, খেয়েছি বৈকি।” হরিমোহিনী তাহার ঢাকা খাবার দেখাইয়া কহিলেন, “কোথায় খেয়েছ? ওই-যে পড়ে রয়েছে।”

 তখন সুচরিতা বুঝিল, কাল খাবার কথা তাহার মনেই ছিল না।

 হরিমোহিনী রুক্ষ স্বরে কহিলেন, “এ-সব তত ভালো কথা নয়। আমি তোমাদের পরেশবাবুকে যতদূর জানি, তিনি যে এতদুর সব বাড়াবাড়ি ভালোবাসেন তা তো আমার মনে হয় না; তাকে দেখলে মানুষের মন শান্ত হয়। তোমার আজকালকার ভাবগতিক তিনি যদি সব জানতে পারেন তা হলে কী বলবেন বলো দেখি।” .

 হরিমোহিনীর কথার লক্ষ্যটা কী তাহা সুচরিতার বুঝিতে বাকি রহিল না। প্রথমটা মুহূর্তকালের জন্য তাহার মনের মধ্যে সংকোচ আসিয়াছিল। গোরার সহিত তাহার সম্বন্ধকে নিতান্ত সাধারণ স্ত্রীপুরুষের সম্বন্ধের সহিত সমান করিয়া এমনতরো একটা অপবাদের কটাক্ষ যে তাহাদের উপরে পড়িতে পারে, এ কথা সে কখনো চিন্তাই করে নাই। সেই জন্য হরিমোহিনীর বক্রোক্তিতে সে কুণ্ঠিত হইয়া পড়িল। কিন্তু পরক্ষণেই হাতের কাজ ফেলিয়া সে খাড়া হইয়া বসিল এবং হরিমোহিনীর মুখের দিকে চোখ তুলিয়া চাহিল।

 গোরার কথা লইয়া সে মনের মধ্যে কাহারও কাছে কোনো লজ্জা রাখিবে না, ইহা মুহূর্তের মধ্যে সে স্থির করিল এবং কহিল, “মাসি, তুমি তো জানো, কাল গৌরমোহনবাবু এসেছিলেন। তার সঙ্গে আলাপের বিষয়টি আমার মনকে খুব ধিকার করে বসেছিল, সেই জন্যে আমি খাবারের কথা ভুলেই গিয়েছিলুম। তুমি থাকলে কাল অনেক কথা শুনতে পেতে।”

৪৮৫