পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

কম। সে যখন কিছুতে প্রবৃত্ত হয় তখন সে সম্বন্ধে সে চিন্তাই করে না। একেবারে তীরের মতো সোজা চলিয়া যায়।

 আজ প্রাতঃকালে সুচরিতার ঘরে গিয়া গোরা যখন উঠিল তখন হরিমোহিনী পূজায় প্রবৃত্ত ছিলেন। সুচরিতা তাহার বসিবার ঘরে টেবিলের উপরকার বই খাতা কাগজ প্রভৃতি পরিপাটি করিয়া গুছাইয়া রাখিতেছিল, এমন সময় সতীশ আসিয়া যখন খবর দিল গৌরবাবু আসিয়াছেন তখন সুচরিতা বিশেষ বিস্ময় অনুভব করিল না। সে যেন মনে করিয়াছিল আজ গোরা আসিবে।

 গোরা চৌকিতে বসিয়া কহিল, “শেষকালে বিনয় আমাদের ত্যাগ করলে।”

 সুচরিতা কহিল, “কেন, ত্যাগ করবেন কেন- তিনি তো ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন নি।”

 গোরা কহিল, “ব্রাহ্মসমাজে বেরিয়ে গেলে তিনি এর চেয়ে আমাদের বেশি কাছে থাকতেন। তিনি হিন্দুসমাজকে আঁকড়ে ধরে আছেন বলেই একে সব চেয়ে বেশি পীড়ন করছেন। এর চেয়ে আমাদের সমাজকে সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি দিলেই তিনি ভালো করতেন।”

 সুচরিতা মনের মধ্যে একটা কঠিন বেদনা পাইয়া কহিল, “আপনি সমাজকে এমন অতিশয় একান্ত করে দেখেন কেন! সমাজের উপর আপনি এত বেশি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, এ কি আপনার পক্ষে স্বাভাবিক? না অনেকটা নিজের উপর জোর প্রয়োগ করেন?”

 গোরা কহিল, “এখনকার অবস্থায় এই জোর প্রয়োগ করাটাই যে স্বাভাবিক। পায়ের নীচে যখন মাটি টলতে থাকে তখন প্রত্যেক পদেই পায়ের উপর বেশি করে জোর দিতে হয়। এখন যে চারি দিকেই বিরুদ্ধতা, সেই জন্য আমাদের বাক্যে এবং ব্যবহারে একটা বাড়াবাড়ি প্রকাশ পায়। সেটা অস্বাভাবিক নয়।”

 সুচরিতা কহিল, “চারি দিকে যে বিরুদ্ধতা দেখছেন সেটাকে আপনি

৪৮৭