পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 গোরা ভাবিল, এ সম্বন্ধে আর বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়, কিন্তু কিছুতেই থাকিতে পারিল না; প্রশ্ন করিল, “পাত্র কি কাউকে মনে মনে ঠিক করেছেন?”

 হরিমোহিনী কহিলেন; “তা করেছি। পাত্রটি বেশ ভালোই- কৈলাস, আমার ছোটো দেবর! কিছুদিন হল তার বউটি মারা গেছে; মনের মতো বড়ো মেয়ে পায় নি বলেই এতদিন বসে আছে, নইলে সে ছেলে কি পড়তে পায়? রাধারানীর সঙ্গে ঠিক মানাবে।”

 মনের মধ্যে গোরার যতই ছুঁচ ফুটিতে লাগিল ততই সে কৈলাসের সম্বন্ধে প্রশ্ন করিতে লাগিল।

 হরিমোহিনীর দেবরদের মধ্যে কৈলাসই নিজের বিশেষ যত্নে কিছুদূর লেখাপড়া করিয়াছিল- কত দূর তাহা হরিমোহিনী বলিতে পারেন না। পরিবারের মধ্যে তাহারই বিদ্বান বলিয়া খ্যাতি আছে। গ্রামের পোস্ট্মাস্টারের বিরুদ্ধে সদরে দরখাস্ত করিবার সময় কৈলাসই এমন আশ্চর্য ইংরাজি ভাষায় সমস্তটা লিখিয়া দিয়াছিল যে, পোস্ট্-আপিসের কোন্-এক বড়োবাবু স্বয়ং আসিয়া তদন্ত করিয়া গিয়াছিলেন। ইহাতে গ্রামবাসী সকলেই কৈলাসের ক্ষমতায় বিস্ময় অনুভব করিয়াছে। এত শিক্ষা সত্ত্বেও আচারে ধর্মে কৈলাসের নিষ্ঠা কিছুমাত্র হ্রাস হয় নাই।

 কৈলাসের ইতিবৃত্ত সমস্ত বলা হইলে গোরা উঠিয়া দাঁড়াইল, হরিমোহিনীকে প্রণাম করিল এবং কোনো কথা না বলিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

 সিঁড়ি দিয়া গোরা যখন প্রাঙ্গণে নামিয়া আসিতেছে তখন প্রাঙ্গণের অপর প্রান্তে পাকশালায় সুচরিতা কর্মে ব্যাপৃত ছিল। গোরার পদশব্দ শুনিয়া সে দ্বারের কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। গোরা কোনো দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া বাহিরে চলিয়া গেল। সুচরিতা একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া পুনরায় পাকশালার কাজে আসিয়া নিযুক্ত হইল।

 গোরা গলির মোড়ের কাছে আসিতেই হারানবাবুর সঙ্গে তাহার দেখা

৪৯৪