পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

হইল। হারানবাবু একটু হাসিয়া কহিলেন, “আজ সকালেই যে!”

 গোরা তাহার কোনো উত্তর করিল না। হারানবাবু পুনরায় একটু হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ওখানে গিয়েছিলেন বুঝি! সুচরিতা বাড়ি আছে তো।”

 গোরা কহিল, “হাঁ।” বলিয়াই সে হন্‌হন্ করিয়া চলিয়া গেল।

 হারানবাবু একেবারেই সুচরিতার বাড়িতে ঢুকিয়া রান্নাঘরের মুক্ত দ্বার দিয়া তাহাকে দেখিতে পাইলেন; সুচরিতার পালাইবার পথ ছিল না, মাসিও নিকটে ছিলেন না।

 হারানবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “গৌরমোহনবাবুর সঙ্গে এইমাত্র দেখা হল। তিনি এখানেই এত ক্ষণ ছিলেন বুঝি?”

 সুচরিতা তাহার কোনো জবাব না করিয়া হঠাৎ হাঁড়িকুঁড়ি লইয়া অত্যন্ত ব্যস্ত হইয়া উঠিল; যেন এখন তাহার নিশ্বাস ফেলিবার অবকাশ নাই এইরকম ভাবটা জানাইল। কিন্তু হারানবাবু তাহাতে নিরন্ত হইলেন না। তিনি ঘরের বাহিরে সেই প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়া কথাবার্তা আরম্ভ করিয়া দিলেন। হরিমোহিনী সিড়ির কাছে আসিয়া দুই-তিনবার কাশিলেন, তাহাতেও কিছুমাত্র ফল হইল না। হরিমোহিনী হারানবাবুর সমুখেই আসিতে পারিতেন কিন্তু তিনি নিশ্চয় বুঝিয়াছিলেন, একবার যদি তিনি হারানবাবুর সম্মুখে বাহির হন তবে এ বাড়িতে এই উদ্যমশীল যুবকের অদম্য উৎসাহ হইতে তিনি এবং সুচরিতা কোথাও আত্মরক্ষা করিতে পারিবেন না। এই জন্য হারানবাবুর ছায়া দেখিলেও তিনি এতটা পরিমাণে ঘোমটা টানিয়া দেন যে তাহা তাঁহার বধূবয়সেও তাহার পক্ষে অতিরিক্ত বলিয়া গণ্য হইতে পারিত।

 হারানবাবু কহিলেন, “সুচরিতা, তোমরা কোন্ দিকে চলেছ বলো দেখি। কোথায় গিয়ে পৌছবে? বোধ হয় শুনেছ ললিতার সঙ্গে বিনয়বাবুর হিন্দুমতে বিয়ে হবে। তুমি জান এ জন্যে কে দায়ী?”

 সুচরিতার নিকট কোনো উত্তর না পাইয়া হারানবাবু স্বর নত করিয়া

৪৯৫