পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ভাবছ, ওটা একটা খাদ্যদ্রব্য, দিব্যি গিলে ফেলে তার পরে আবার ঘরে ফিরে আসবে। কিন্তু বঁড়শিটি ভিতরে আছে, সে তোমার বন্ধুর দশা দেখলেই বুঝতে পারবে। আরে, যাও কোথায়! আসল কথাটাই এখনো হয় নি। ও দিকে ব্রাহ্ম মেয়ের সঙ্গে বিনয়ের বিয়ে তো একেবারে পাকা হয়ে গেছে শুনতে পাচ্ছি। তার পর কিন্তু ওঁর সঙ্গে আমাদের কোনোরকম ব্যবহার চলবে না, সে আমি তোমাকে আগে থাকতেই বলে রাখছি।”

 গোরা কহিল, “সে তো চলবেই না।”

 মহিম কহিলেন, “কিন্তু মা যদি গোলমাল করেন তা হলে সুবিধা হবে না। আমরা গৃহস্থ মানুষ, অমনিতেই মেয়েছেলের বিয়ে দিতে জিব বেরিয়ে পড়ে, তার পরে যদি ঘরের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজ বসাও তা হলে আমাকে কিন্তু এখান থেকে বাস ওঠাতে হবে।”

 গোরা কহিল, “না, সে কিছুতেই হবে না।”

 মহিম কহিলেন, “শশীর বিবাহের প্রস্তাবটা ঘনিয়ে আসছে। আমাদের বেহাই যতটুকু পরিমাণ মেয়ে ঘরে নেবেন সোনা তার চেয়ে বেশি না নিয়ে ছাড়বেন না, কারণ তিনি জানেন মানুষ নশ্বর পদার্থ, সোনা তার চেয়ে বেশি দিন টেঁকে। ওষুধের চেয়ে অনুপানটার দিকেই তাঁর ঝোঁক বেশি। বেহাই বললে তাঁকে খাটো করা হয়, একেবারে বেহায়া। কিছু খরচ হবে বটে, কিন্তু লোকটার কাছে আমার অনেক শিক্ষা হল— ছেলের বিয়ের সময় কাজে লাগবে। ভারী লোভ হচ্ছিল, আর-একবার একালে জন্মগ্রহণ করে বাবাকে মাঝখানে বসিয়ে রেখে নিজের বিয়েটা একবার বিধিমত পাকিয়ে তুলি, পুরুষজন্ম যে গ্রহণ করেছি সেটাকে একেবারে যোলো-আনা সার্থক করে নিই। একেই তো বলে পৌরুষ। মেয়ের বাপকে একেবারে ধরাশায়ী কয়ে দেওয়া। কম কথা! যাই বল, তোমার সঙ্গে যোগ দিয়ে যে নিশিদিন হিন্দুসমাজের জয়ধ্বনি করব, কিছুতেই তাতে জোর পাচ্ছি নে। ভাই- গলা উঠতে চায় না- একেবারে কাহিল করে ফেলেছে। আমার তিনকড়েটার বয়স এখন সবে চৌদ্দ মাস- গোড়ায় কন্যা জন্ম দিয়ে শেষে

৫০১