পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তার ভ্রম সংশোধন করতে সহধর্মিণী দীর্ঘকাল সময় নিয়েছেন। যা হোক, ওরই বিবাহের সময়টা পর্যন্ত, গোরা, তোমরা সকলে মিলে হিন্দুসমাজটাকে তাজা রেখো; তার পর দেশের লোক মুসলমান হোক, খৃস্টান হোক, আমি কোনো কথা কব না।”

 গোরা উঠিয়া দাঁড়াইতেই মহিম কহিলেন, “তাই আমি বলছিলুম, শশীর বিবাহের সভায় তোমাদের বিনয়কে নিমন্ত্রণ করা চলবে না। তখন যে এই কথা নিয়ে আবার একটা কাণ্ড বাধিয়ে তুলবে সে হবে না। মাকে তুমি এখন থেকে সাবধান করে রেখে দিয়ো।”

 মাতার ঘরে আসিয়া গোরা দেখিল, আনন্দময়ী মেঝের উপর বসিয়া চশমা চোখে আঁটিয়া একটা খাতা লইয়া কিসের ফর্দ করিতেছেন। গোরাকে দেখিয়া তিনি চশমা খুলিয়া খাতা বন্ধ করিয়া কহিলেন, “বোস্।”

 গোরা বসিলে আনন্দময়ী কহিলেন, “তোর সঙ্গে আমার একটা পরামর্শ আছে। বিনয়ের বিয়ের খবর তো পেয়েছিস?”

 গোরা চুপ করিয়া রহিল। আনন্দময়ী কহিলেন, “বিনয়ের কাকা রাগ করেছেন, তাঁরা কেউ আসবেন না। আবার পরেশবাবুর বাড়িতেও এ বিয়ে হয় কি না সন্দেহ। বিনয়কেই সমস্ত বন্দোবস্ত করতে হবে। তাই আমি বলছিলুম, আমাদের বাড়ির উত্তর-ভাগটার একতলা তো ভাড়া দেওয়া হয়েছে- ওর দোতলার ভাড়াটেও উঠে গেছে। ওই দোতলাতেই যদি বিনয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করা যায় তা হলে সুবিধা হয়।”

 গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “কী সুবিধা হয়?”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “আমি না থাকলে ওর বিয়েতে দেখাশুনা করবে কে? ও যে মহা বিপদে পড়ে যাবে। ওখানে যদি বিয়ের ঠিক হয় তা হলে আমি এই বাড়ি থেকেই সমস্ত জোগাড়যন্ত্র করে দিতে পারি, কোনো হাঙ্গাম করতে হয় না।”

 গোরা কহিল, “সে হবে না মা।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “কেন হবে না? কর্তাকে আমি রাজি করেছি।”

৫০২