পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

নে, এ কথা আমাদের পক্ষে সুখের কথা নয়। বিনয়কে আমি যে কতখানি ভালোবাসি সে আর-কেউ না জানে তো তুমি জান। কিন্তু মা, এ ভালোবাসার কথা নয়, এর মধ্যে শত্রুতা মিত্রতা কিছুমাত্র নেই। বিনয় এর ফলাফল সমস্ত জেনেশুনেই এ কাজে প্রবৃত্ত হয়েছে। আমরা তাকে পরিত্যাগ করি নি, সে’ই আমাদের পরিত্যাগ করেছে, সুতরাং এখন যে বিচ্ছেদ ঘটেছে সে জন্যে সে এমন কোনো আঘাত পাবে না যা তার প্রত্যাশার অতীত।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “গোরা, বিনয় জানে, এই বিয়েতে তোমার সঙ্গে তার কোনোরকম যোগ থাকবে না সে কথা ঠিক। কিন্তু এও সে নিশ্চয় জানে, শুভকর্মে আমি তাকে কোনোমতেই পরিত্যাগ করতে পারব না। বিনয়ের বউকে আমি আশীর্বাদ করে গ্রহণ করব না এ কথা বিনয় যদি মনে করত তা হলে আমি বলছি, সে প্রাণ গেলেও এ বিয়ে করতে পারত না। আমি কি বিনয়ের মন জানি নে!”

 বলিয়া আনন্দময়ী চোখের কোণ হইতে এক ফোঁটা অশ্রু মুছিয়া ফেলিলেন। বিনয়ের জন্য গোরার মনের মধ্যে যে গভীর বেদনা ছিল তাহা আলোড়িত হইয়া উঠিল। তবু সে বলিল, “মা, তুমি সমাজে আছ এবং সমাজের কাছে তুমি ঋণী, এ কথা তোমাকে মনে রাখতে হবে।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “গোরা, আমি তো তোমাকে বার বার বলেছি, সমাজের সঙ্গে আমার যোগ অনেক দিন থেকেই কেটে গেছে। সে জন্যে সমাজ আমাকে ঘৃণা করে, আমিও তার থেকে দূরে থাকি।”

 গোরা কহিল, “মা, তোমার এই কথায় আমি সব চেয়ে আঘাত পাই।”

 আনন্দময়ী তাঁহার অশ্রুছলছল স্নিগ্ধদৃষ্টি-দ্বারা গোরার সর্বাঙ্গ যেন স্পর্শ করিয়া কহিলেন, “বাছা, ঈশ্বর জানেন, তোকে এ আঘাত থেকে বাঁচাবার সাধ্য আমার নেই।”

গোরা উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “তা হলে আমাকে কী করতে হবে তোমাকে বলি। আমি বিনয়ের কাছে চললুম, তাকে আমি বলব তোমাকে

৫০৪