পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 কৃষ্ণদয়াল। সে তো জানি। তা, তোমার গোরাকে নিয়ে তুমি থাকো, আমি তো কখনো তাতে কোনো বাধা দিই নি। কিন্তু, ওকে ছেলে বলে পরিচয় দিয়ে তার পরে ওর পইতে না দিলে তো সমাজে মানবে না। তাই পইতে কাজেই দিতে হল। এখন কেবল দুটি কথা ভাববার আছে। ন্যায়ত আমার বিষয়সম্পত্তি সমস্ত মহিমেরই প্রাপ্য— তাই—

 আনন্দময়ী। কে তোমার বিষয়সম্পত্তির অংশ নিতে চায়। তুমি যত টাকা করেছ সব তুমি মহিমকে দিয়ে যেয়ো, গোরা তার এক পয়সাও নেবে না। ও পুরুষমানুষ, লেখাপড়া শিখেছে, নিজে খেটে উপার্জন করে খাবে; ও পরের ধনে ভাগ বসাতে যাবে কেন। ও বেঁচে থাক্‌, সেই আমার ঢের; আমার আর কোনো সম্পত্তির দরকার নেই।

 কৃষ্ণদয়াল। না, ওকে একেবারে বঞ্চিত করব না, জায়গিরটা ওকেই দিয়ে দেব; কালে তার মুনফা বছরে হাজার টাকা হতে পারবে। এখন ভাবনার কথা হচ্ছে ওর বিবাহ দেওয়া নিয়ে। পূর্বে যা করেছি তা করেছি, কিন্তু এখন তো হিন্দুমতে ব্রাহ্মণের ঘরে ওর বিয়ে দিতে পারব না— তা, এতে তুমি রাগই কর আর যাই কর।

 আনন্দময়ী। হায় হায়, তুমি মনে কর, তোমার মধ্যে পৃথিবীময় গঙ্গাজল আর গোবর ছিটিয়ে বেড়াই নে বলে আমার ধর্মজ্ঞান নেই। ব্রাহ্মণের ঘরে ওর বিয়েই বা দেব কেন, আর রাগ করবই বা কী জন্যে।

 কৃষ্ণদয়াল। বল কী! তুমি যে বামুনের মেয়ে।

 আনন্দময়ী। তা হই-না বামুনের মেয়ে। বামনাই করা তো আমি ছেড়েই দিয়েছি। ওই তো মহিমের বিয়ের সময় আমার খৃস্টানি চাল বলে কুটুম্বরা গোল করতে চেয়েছিল; আমি তাই ইচ্ছে করেই তফাত হয়ে ছিলুম, কথাটি কই নি। পৃথিবীসুদ্ধ লোক আমাকে খৃস্টান বলে, আরও কত কী কথা কয়— আমি সমস্ত মেনে নিয়েই বলি, ‘তা খৃস্টান কি মানুষ নয়। তোমরাই যদি এত উচু জাত আর ভগবানের এত আদরের, তবে তিনি একবার পাঠানের, একবার মোগলের, একবার খৃস্টানের পায়ে এমন

৪৩