পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বড়ো দেশে তুই জন্মেছিস, সমস্ত হৃদয় দিয়ে এই বড়ো দেশকে ভক্তি করবি আর সমস্ত জীবন দিয়ে এই বড়ো দেশের কাজ করবি।”

 সতীশ একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, “দিদি, তুমি কী করবে?”

 সুচরিতা কহিল, “আমিও এই কাজ করব। তুই আমাকে সাহায্য করবি তো?”

 সতীশ তৎক্ষণাৎ বুক ফুলাইয়া কহিল, “হাঁ, করব।”

 সুচরিতার হৃদয় পূর্ণ করিয়া যে কথা জমিয়া উঠিতেছিল তাহা বলিবার লোক বাড়িতে কেহই ছিল না। তাই আপনার এই ছোটো ভাইটিকে কাছে পাইয়া তাহার সমস্ত আবেগ উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল। সে যে ভাষায় যাহা বলিল তাহা বালকের কাছে বলিবার নহে, কিন্তু সুচরিতা তাহাতে সংকুচিত হইল না। তাহার মনের এইরূপ উৎসাহিত অবস্থায় এই জ্ঞানটি সে পাইয়াছিল যে, যাহা নিজে বুঝিয়াছি তাহাকে পূর্ণভাবে বলিলে তবেই ছেলেবুড়া সকলে আপন আপন শক্তি অনুসারে তাহাকে একরকম বুঝিতে পারে, তাহাকে অন্যের বুদ্ধির উপযোগী করিয়া হাতে রাখিয়া বুঝাইতে গেলেই সত্য আপনি বিকৃত হইয়া যায়।

 সতীশের কল্পনাবৃত্তি উত্তেজিত হইয়া উঠিল; সে কহিল, “বড় হলে আমার যখন অনেক অনেক টাকা হবে তখন-”

সুচরিতা কহিল, “না, না, না, টাকার কথা মুখে আনিস নে, আমাদের দুজনের টাকার দরকার নেই বক্তিয়ার— আমরা যে কাজ করব তাতে ভক্তি চাই, প্রাণ চাই।”

 এমন সময়ে ঘরের মধ্যে আনন্দময়ী আসিয়া প্রবেশ করিলেন। সুচরিতার বুকের ভিতরে রক্ত নৃত্য করিয়া উঠিল- সে আনন্দময়ীকে প্রণাম করিল। প্রণাম করা সতীশের ভালো আসে না; সে লজ্জিতভাবে কোনোমতে কাজটা সারিয়া লইল।

 আনন্দময়ী সতীশকে কোলের কাছে টানিয়া লইয়া তাহার শিরশ্চুম্বন করিলেন, এবং সুচরিতাকে কহিলেন, “তোমার সঙ্গে একটু পরামর্শ করতে

৫৩০