পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ললিতাকে সাজাইয়া দিবেন, বরকে বরণ করিয়া লইবার ব্যবস্থা করিবেন-যদি নিমন্ত্রিত দুই-চারি জন আসে তাহাদের আদর-অভ্যর্থনার লেশমাত্র ত্রুটি না হয় তাহা দেখিবেন, এবং এই নূতন বাসাবাড়িকে এমন করিয়া সাজাইয়া তুলিবেন যাহাতে ললিতা ইহাকে একটা বাসস্থান বলিয়া অনুভব করিতে পারে, ইহাই তাঁহার সংকল্প।

 সুচরিতা কহিল, “এতে তোমাকে নিয়ে কোনো গোলমাল হবে না?”

 বাড়িতে মহিম যে তোলপাড় বাধাইয়াছে তাহা স্মরণ করিয়া আনন্দময়ী কহিলেন, “তা হতে পারে, তাতে কী হবে। গোলমাল কিছু হয়েই থাকে; চুপ করে সয়ে থাকলে আবার কিছুদিন পরে সমস্ত কেটেও যায়।”

 সুচরিতা জানিত এই বিবাহে গোরা যোগ দেয় নাই। আনন্দময়ীকে বাধা দিবার জন্য গোরার কোনো চেষ্টা ছিল কি না ইহাই জানিবার জন্য সুচরিতার ঔৎসুক্য ছিল। সে কথা সে স্পষ্ট করিয়া পাড়িতে পারিল না, এবং আনন্দময়ী গোরার নামমাত্রও উচ্চারণ করিলেন না।

 হরিমোহিনী খবর পাইয়াছিলেন। ধীরে সুস্থে হাতের কাজ সারিয়া তিনি ঘরের মধ্যে আসিলেন এবং কহিলেন, “দিদি, ভালো আছ তো? দেখাই নেই, খবরই নাও না!”

 আনন্দময়ী সেই অভিযোগের উত্তর না করিয়া কহিলেন, “তোমার বোনঝিকে নিতে এসেছি।”

 এই বলিয়া তাঁহার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করিয়া বলিলেন। হরিমোহিনী অপ্রসন্ন মুখে কিছু ক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন; পরে কহিলেন, “আমি তো এর মধ্যে যেতে পারব না।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “না বোন, তোমাকে আমি যেতে বলি নে। সুচরিতার জন্যে তুমি ভেব না— আমি তো ওর সঙ্গেই থাকব।”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “তবে বলি। রাধারানী তো লোকের কাছে বলেছেন উনি হিন্দু। এখন ওঁর মতিগতি হিঁদুয়ানির দিকে ফিরেছে। তা উনি যদি হিন্দুসমাজে চলতে চান, তা হলে ওঁকে সাবধান হতে হবে।

৫৩২