পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পছন্দ হয়ে যেতেও পারে। তার পরে প্রজাপতির নির্বন্ধ।”

 আনন্দময়ী। বল কী! গোরা ব্রাহ্মর বাড়ি যাতায়াত করবে। সেদিন ওর আর নেই।

 বলিতে বলিতে স্বয়ং গোরা তাহার মেঘমন্দ্র স্বরে ‘মা’ বলিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। কৃষ্ণদয়ালকে এখানে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া সে কিছু আশ্চর্য হইয়া গেল। আনন্দময়ী তাড়াতাড়ি উঠিয়া গোরার কাছে গিয়া দুই চক্ষে স্নেহ বিকীর্ণ করিতে করিতে কহিলেন, “কী বাবা, কি চাই।”

 “না বিশেষ কিছু না, এখন থাক্” বলিয়া গোরা ফিরিবার উপক্রম করিল।

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “একটু বোসো, একটা কথা আছে। আমার একটি ব্রাহ্মবন্ধু সম্প্রতি কলকাতায় এসেছেন; তিনি হেদোতলায় থাকেন।”

 গোরা। পরেশবাবু নাকি।

 কৃষ্ণদয়াল। তুমি তাঁকে জানলে কী করে।

 গোরা। বিনয় তাঁর বাড়ির কাছেই থাকে, তার কাছে তাঁদের গল্প শুনেছি।

কৃষ্ণদয়াল। আমি ইচ্ছা করি, তুমি তাদের খবর নিয়ে এসো।

 গোরা আপন মনে একটু চিন্তা করিল, তার পরে হঠাৎ বলিল, “আচ্ছা, আমি কালই যাব।”

 আনন্দময়ী কিছু আশ্চর্য হইলেন।

 গোরা একটু ভাবিয়া আবার কহিল, “না, কাল তো আমার যাওয়া হবে না।”

 কৃষ্ণদয়াল। কেন।

 গোরা। কাল আমাকে ত্রিবেণী যেতে হবে।

 কৃষ্ণদয়াল আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “ত্রিবেণী!”

 গোর। কাল সূর্যগ্রহণের স্নান।

 আনন্দময়ী। তুই অবাক করলি গোরা। স্নান করতে চাস কলকাতার গঙ্গা আছে। ত্রিবেণী না হলে তোর স্নান হবে না— তুই যে দেশসুদ্ধ সকল

৪৫