পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 কৈলাস কিছু ক্ষণ চিন্তা করিয়া শেষকালে স্থির করিল, ‘নাহয় মকদ্দমাটা এক-তরফা ডিগ্রি হয়ে ফেঁসে যাবে। তা যাক গে।’ এখানে যে তাহার ক্ষতিপূরণের আয়োজন আছে তাহা আর-একবার চারি দিক নিরীক্ষণ করিয়া বিচার করিয়া লইল। হঠাৎ চোখে পড়িল, হরিমোহিনীর পূজার ঘরের কোণে কিছু জল জমিয়া আছে। এ ঘরে জল-নিকাশের কোনো প্রণালী ছিল না অথচ হরিমোহিনী সর্বদাই জল দিয়া এ ঘর ধোওয়ামোছা করেন, সেইজন্য কিছু জল একটা কোণে বাধিয়াই থাকে; কৈলাস ব্যস্ত হইয়া কহিল, “বউঠাকরুন, ওটা তো ভালো হচ্ছে না।”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “কেন, কী হয়েছে?”

 কৈলাস কহিল, “ওই-যে ওখানে জল বসছে, ও তো কোনোমতে চলবে না।”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “কী করব ঠাকুরপো।”

 কৈলাস কহিল, “না, না, সে হচ্ছে না। ছাত যে একেবারে জখম হয়ে যাবে। তা বলছি বউঠাকরুন, এ ঘরে তোমার জল-ঢালাচালি চলবে না।”

 হরিমোহিনীকে চুপ করিয়া যাইতে হইল। কৈলাস তখন কন্যাটির রূপ সম্বন্ধে কৌতূহল প্রকাশ করিল।

 হরিমোহিনী কহিলেন, “সে তো দেখলেই টের পাবে, এপর্যন্ত বলতে পারি তোমাদের ঘরে এমন বউ কখনো হয় নি।”

 কৈলাস কহিল, “বল কী! আমাদের মেজবউ-”।

 হরিমোহিনী বলিয়া উঠিলেন, “কিসে আর কিসে! তোমাদের মেজবউ তার কাছে দাঁড়াতে পারে!”

 মেজবউকেই তাহাদের বাড়ির সুরূপের আদর্শ বলাতে হরিমোহিনী বিশেষ সন্তোষ বোধ করেন না- “তোমরা যে যাই বলো বাপু, মেজবউয়ের চেয়ে আমার কিন্তু ন-বউকে ঢের বেশি পছন্দ হয়।”

 মেজবউ ও ন-বউয়ের সৌন্দর্যের তুলনায় কৈলাস কিছুমাত্র উৎসাহ বোধ করিল না। সে মনে মনে কোন একটি অদৃষ্টপূর্ব মূর্তিতে পটল-চেরা চোখের

৫৪৪