পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সেটা ঠিক।”

 বিনয় কহিল, “তুমি হয়তো যাবে না, জানি- কিন্তু আজকের দিনে তোমাকে একবার না বলে এ কাজে আমি প্রবৃত্ত হতে পারব না। তাই আজ ভোরে উঠেই প্রথম তোমার কাছে এসেছি।”

 গোরা কোনো কথা না বলিয়া স্থির হইয়া বসিয়া রহিল।

 বিনয় কহিল, “তা হলে আমার বিবাহের সভায় যেতে পারবে না, এ কথা নিশ্চয় স্থির?”

 গোরা কহিল, “না বিনয়, আমি যেতে পারব না।”

 বিনয় চুপ করিয়া রহিল। গোরা হৃদয়ের বেদনা সম্পূর্ণ গোপন করিয়া হাসিয়া কহিল, “আমি নাইবা গেলুম, তাতে কী? তোমারই তো জিত হয়েছে। তুমি তো মাকে টেনে নিয়ে গেছ। এত চেষ্টা করলুম, তাঁকে তো কিছুতে ধরে রাখতে পারলুম না। শেষে আমার মাকে নিয়েও তোমার কাছে আমার হার মানতে হল! বিনয়, একে একে ‘সব লাল হো যায়গা’ নাকি! আমার মানচিত্রটাতে কেবল আমিই একলা এসে ঠেকব!”

 বিনয় কহিল, “ভাই, আমাকে দোষ দিয়ো না কিন্তু। আমি তাঁকে খুব জোর করেই বলেছিলুম- মা, আমার বিয়েতে তুমি কিছুতেই যেতে পাবে না। মা বললেন, “দেখ্ বিনু, তোর বিয়েতে যারা যাবে না তারা তোর নিমন্ত্রণ পেলেও যাবে না, আর যারা যাবে তাদের তুই মানা করলেও যাবে-সেইজন্যেই তোকে বলি, তুই কাউকে নিমন্ত্রণ করিস নে, মানাও করিস নে, চুপ করে থাক্‌। গোরা, তুমি কি আমার কাছে হার মেনেছ? তোমার মার কাছে তোমার হার, সহস্রবার হার। অমন মা কি আর আছে!”

 গোরা যদিচ আনন্দময়ীকে বদ্ধ করিবার জন্য সম্পূর্ণ চেষ্টা করিয়াছিল, তথাপি তিনি যে তাহার কোনো বাধা না মানিয়া, তাহার ক্রোধ ও কষ্টকে গণ্য না করিয়া, বিনয়ের বিবাহে চলিয়া গেলেন, ইহাতে গোরা তাহার অন্তরতর হৃদয়ের মধ্যে বেদনা বোধ করে নাই, বরঞ্চ একটা আনন্দ লাভ করিয়াছিল। বিনয় তাহার মাতার অপরিমেয় মেহের যে অংশ পাইয়াছিল,

৫৪৬