পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 কোথায়?

 তিনি ললিতাদিদির বিবাহের আয়োজনে কয়দিন হইতে অন্যত্র ব্যাপৃত রহিয়াছেন।

 ক্ষণকালের জন্য গোরা মনে করিল, সে বিনয়ের বিবাহসভাতেই যাইবে। এমন সময় বাড়ির ভিতর হইতে একটি অপরিচিত বাবু বাহির হইয়া কহিল, “কী মহাশয়, কী চান?”

 গোরা তাহাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া কহিল, “না, কিছু চাই নে।”

 কৈলাস কহিল, “আসুন-না একটু বসবেন, একটু তামাক ইচ্ছা করুন।”

 সঙ্গীর অভাবে কৈলাসের প্রাণ বাহির হইয়া যাইতেছে। যে হোক একজন কাহাকেও ঘরের মধ্যে টানিয়া লইয়া গল্প জমাইতে পারিলে সে বাঁচে। দিনের বেলায় হুঁকা হাতে গলির মোড়ের কাছে দাঁড়াইয়া রাস্তার লোক-চলাচল দেখিয়া তাহার সময় এক-রকম কাটিয়া যায়, কিন্তু সন্ধ্যার সময় ঘরের মধ্যে তাহার প্রাণ হাঁপাইয়া উঠে। হরিমোহিনীর সঙ্গে তাহার যাহা-কিছু আলোচনা করিবার ছিল তাহা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হইয়া গেছে- হরিমোহিনীর আলাপ করিবার শক্তিও অত্যন্ত সংকীর্ণ। এইজন্য কৈলাস নীচের তলায় বাহির-দরজার পাশে একটি ছোটো ঘরে তক্তপোশে হুঁকা লইয়া বসিয়া মাঝে মাঝে বেহারাটাকে ডাকিয়া তাহার সঙ্গে গল্প করিয়া সময় যাপন করিতেছে।

 গোরা কহিল, “না, আমি এখন বসতে পারছি নে।”

 কৈলাসের পুনশ্চ অনুরোধের সূত্রপাতেই, চোখের পলক না ফেলিতেই, সে একেবারে গলি পার হইয়া গেল।

 গোরার একটি সংস্কার তাহার মনের মধ্যে দৃঢ় হইয়া ছিল যে, তাহার জীবনের অধিকাংশ ঘটনাই আকস্মিক নহে, অথবা কেবলমাত্র তাহার নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছার দ্বারা সাধিত হয় না। সে তাহার স্বদেশবিধাতার একটিকোনো অভিপ্রায় সিদ্ধ করিবার জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছে।

৫৫১