পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বিবাহ করিবার চেষ্টা করিতেছে, সে বিবাহের গূঢ় উদ্দেশ্যও যে মহৎ নহে, এবং রায়গোষ্ঠীর সহযোগে যদি তিনি সুচরিতাকে রক্ষা করিতে না পারেন তবে কালে যে তাহাই ঘটিবে, সে সম্বন্ধে তিনি তাঁহার নিঃসংশয় বিশ্বাস প্রকাশ করিলেন।

 সহিষ্ণুস্বভাব সুচরিতার পক্ষে অসহ্য হইয়া উঠিল; সে কহিল, “তুমি যাঁদের কথা বলছ আমি তাদের ভক্তি করি। তাঁদের সঙ্গে আমার যে সম্বন্ধ সে যখন তুমি কোনোমতেই ঠিকভাবে বুঝবে না, তখন আমার আর-কোনো উপায় নেই- আমি এখনই এখান থেকে চললুম, যখন তুমি শান্ত হবে এবং বাড়িতে তোমার সঙ্গে একলা এসে বাস করতে পারব, তখন আমি ফিরে আসব।”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “গৌরমোহনের প্রতিই যদি তোর মন নেই, যদি তার সঙ্গে তোর বিয়ে হবেই না এমন কথা থাকে, তবে এই পাত্রটি দোষ করেছে কী? তুমি তো আইবুড়ো থাকবে না।”

 সুচরিতা কহিল, “কেন থাকব না? আমি বিবাহ করব না।”

 হরিমোহিনী চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া কহিলেন, “বুড়োবয়স পর্যন্ত এমনি—”

 সুচরিতা কহিল, “হাঁ, মৃত্যু পর্যন্ত।”



৭১

এই আঘাতে গোরার মনে একটা পরিবর্তন আসিল। সুচরিতার দ্বারা গোরার মন যে আক্রান্ত হইয়াছে তাহার কারণ সে ভাবিয়া দেখিল- সে ইহাদের সঙ্গে মিশিয়াছে, কখন নিজের অগোচরে সে ইহাদের সঙ্গে নিজেকে জড়িত করিয়া ফেলিয়াছে। যেখানে নিষেধের সীমা টানা ছিল সেই সীমা গোরা দম্ভভরে লঙ্ঘন করিয়াছে। ইহা আমাদের দেশের পদ্ধতি নহে। প্রত্যেকে নিজের সীমা রক্ষা করিতে না পারিলে সে যে কেবল জানিয়া এবং জানিয়া নিজেরই অনিষ্ট করিয়া ফেলে তাহা নহে, অন্যেরও হিত করিবার

৫৬০