পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 কৃষ্ণদয়াল শশব্যস্ত হইয়া ঠাকুরঘরে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, সত্যই গোরা পূজায় বসিয়া গেছে।

 কৃষ্ণদয়াল বাহির হইতে ডাকিলেন, “গোরা!”

 গোরা তাহার পিতার আগমনে আশ্চর্য হইয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। কৃষ্ণদয়াল তাহার সাধনাশ্রমে বিশেষভাবে নিজের ইষ্টদেবতার প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। ইহাদের পরিবার বৈষ্ণব, কিন্তু তিনি শক্তিমন্ত্র লইয়াছেন, গৃহদেবতার সঙ্গে তাঁহার প্রত্যক্ষ যোগ অনেক দিন হইতেই নাই।

 তিনি গোরাকে কহিলেন, “এসো এসো, বাইরে এসো।”

 গোরা বাহির হইয়া আসিল। কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “এ কী কাণ্ড! এখানে তোমার কী কাজ?”

 গোরা কোনো উত্তর করিল না। কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “পূজারি ব্রাহ্মণ আছে, সে তো প্রত্যহ পূজা করে, তাতেই বাড়ির সকলেরই পূজা হচ্ছে— তুমি কেন এর মধ্যে এসেছ!”

 গোরা কহিল, “তাতে কোনো দোষ নেই।”

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “দোষ নেই! বল কী! বিলক্ষণ দোষ আছে। যার যাতে অধিকার নেই তার সে কাজে যাবার দরকার কী। ওতে যে অপরাধ হচ্ছে। শুধু তোমার নয়, বাড়িসুদ্ধ আমাদের সকলের।”

 গোরা কহিল, “যদি অন্তরের ভক্তির দিক দিয়ে দেখেন তা হলে দেবতার সামনে বসবার অধিকার অতি অল্প লোকেরই আছে। কিন্তু আপনি কি বলেন, আমাদের ওই রামহরি ঠাকুরের এখানে পূজা করবার যে অধিকার আছে আমার সে অধিকারও নেই?”

 কৃষ্ণদয়াল গোরাকে কী জবাব দিবেন, হঠাৎ ভাবিয়া পাইলেন না। একটু চুপ করিয়া থাকিয়া কহিলেন, “দেখো, পূজা করাই রামহরির জাত-ব্যাবসা। ব্যাবসাতে যে অপরাধ হয় দেবতা সেটা নেন না। ও জায়গায় ত্রুটি ধরতে গেলে ব্যাবসা বন্ধই করতে হয়, তা হলে সমাজের কাজ চলে না। কিন্তু তোমার তো সে ওজর নেই। তোমার এ ঘরে ঢোকবার

৫৬৬