পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

হিন্দুধর্মে তুমি প্রবেশ করতে পেরেছ এইটে তুমি মনে করছ, কিন্তু সে তোমার সম্পূর্ণ ই ভুল। সে তোমার সাধ্যই নেই। তোমার প্রত্যেক রক্তের কণা, তোমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার প্রতিকূল। হিন্দু হঠাৎ হবার জো নেই! ইচ্ছা করলেও জো নেই। জন্ম-জন্মান্তরের সুকৃতি চাই।”

 গোরার মুখ রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল। সে কহিল, “জন্মান্তরের কথা জানি নে, কিন্তু আপনাদের বংশের রক্তধারায় যে অধিকার প্রবাহিত হয়ে আসছে আমি কি তারও দাবি করতে পারব না?”

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “আবার তর্ক! আমার মুখের উপর প্রতিবাদ করতে তোমার সংকোচ হয় না। এ দিকে বল হিন্দু। বিলাতি ঝাঁজ যাবে কোথায়। আমি যা বলি তাই শোনো। ও-সমস্ত বন্ধ করে দাও।”

 গোরা নতশিরে চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। একটু পরে কহিল, “যদি প্রায়শ্চিত্ত না করি তা হলে কিন্তু শশিমুখীর বিবাহে আমি সকলের সঙ্গে বসে খেতে পারব না।”

 কৃষ্ণদয়াল উৎসাহিত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “বেশ তো। তাতেই বা দোষ কী? তোমার জন্যে নাহয় আলাদা আসন করে দেবে।”

 গোরা কহিল, “সমাজে তা হলে আমাকে স্বতন্ত্র হয়েই থাকতে হবে।”

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “সে তত ভালোই।”

 তাঁহার এই উৎসাহে গোরাকে বিস্মিত হইতে দেখিয়া কহিলেন, “এই দেখো-না, আমি কারও সঙ্গে খাই নে, নিমন্ত্রণ হলেও না। সমাজের সঙ্গে আমার যোগ কী বা আছে? তুমি যে-রকম সাত্ত্বিকভাবে জীবন কাটাতে চাও তোমারও তো এইরকম পন্থাই অবলম্বন করা শ্রেয়। আমি তো দেখছি, এতেই তোমার মঙ্গল।”

 মধ্যাহ্নে অবিনাশকে ডাকাইয়া কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “তোমরাই বুঝি সকলে মিলে গোরাকে নাচিয়ে তুলেছ?”

 অবিনাশ কহিলেন, “বলেন কী! আপনার গোরাই তো আমাদের সকলকে নাচায়। বরঞ্চ সে নিজেই নাচে কম।”

৫৬৮