পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বিনয় ঘরে আসিয়া বসিল, তাহার হৃৎপিণ্ড বেগে উঠিতে পড়িতে লাগিল। পরেশ কহিলেন, “হাঁপিয়ে পড়েছেন বুঝি। সতীশ ভারি দুরম্ভ ছেলে।”

 ঘরে যখন সতীশ তাহার দিদিকে লইয়া প্রবেশ করিল তখন বিনয় প্রথমে একটি মৃদু সুগন্ধ অনুভব করিল; তাহার পরে শুনিল পরেশবাবু বলিতেছেন, “রাধে, বিনয়বাবু এসেছেন। এঁকে তো তুমি জানই।”

 বিনয় চকিতের মতো মুখ তুলিয়া দেখিল, সুচরিতা তাহাকে নমস্কার করিয়া সামনের চৌকিতে বসিল। এবার বিনয় প্রতিনমস্কার করিতে ভুলিল ন।

 সুচরিতা কহিল, “উনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওঁকে দেখা মাত্র সতীশকে আর ধরে রাখা গেল না, সে গাড়ি থেকে নেমেই ওঁকে টেনে নিয়ে এল। আপনি হয়তো কোনো কাজে যাচ্ছিলেন— আপনার তো কোনো অসুবিধে হয় নি?”

 সুচরিতা বিনয়কে সম্বোধন করিয়া কোনো কথা কহিবে বিনয় তাহা প্রত্যাশাই করে নাই। সে কুণ্ঠিত হইয়া ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, “না, আমার কোনো কাজ ছিল না, অসুবিধে কিছুই হয় নি।”

 সতীশ সুচরিতার কাপড় ধরিয়া টানিয়া কহিল, “দিদি, চাবিটা দাও ন। আমাদের সেই আর্গিনটা এনে বিনয়বাবুকে দেখাই।”

 সুচরিতা হাসিয়া কহিল, “এই বুঝি শুরু হল! যার সঙ্গে বক্তিয়ারের ভাব হবে তার আর রক্ষে নেই— আর্গিন তো তাকে শুনতেই হবে- আরও অনেক দুঃখ তার কপালে আছে। বিনয়বাবু, আপনার এই বন্ধুটি ছোটো, কিন্তু এর বন্ধুত্বের দায় বড়ো বেশি— সহ্য করতে পারবেন কি না জানি নে।”

 বিনয় সুচরিতার এইরূপ অকুণ্ঠিত আলাপে কেমন করিয়া বেশ সহজে যোগ দিবে কোনোমতেই ভাবিয়া পাইল না। লজ্জা করিবে না, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করিয়াও কোনো প্রকারে ভাঙাচোরা করিয়া একটা জবাব দিল, “না, কিছুই না— আপনি সে— আমি- আমার ও বেশ ভালোই লাগে।”

৫৩