পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

একটা মিষ্টবাক্য বলিয়াছিলেন তাহাও বিনয় শুনিল।

 অবশেষে বরদা লাবণ্যকে বলিলেন, “যে সেলাইটার জন্যে তুমি প্রাইজ পেয়েছিলে সেইটে নিয়ে এসে তো মা।”

 একটা পশমের সেলাই-করা টিয়াপাখির মূর্তি এই বাড়ির আত্মীয়-বন্ধুদের নিকট বিখ্যাত হইয়া উঠিয়াছিল। মেমের সহযোগিতায় এই জিনিসটা লাবণ্য অনেক দিন হইল রচনা করিয়াছিল, এই রচনায় লাবণ্যের নিজের কৃতিত্ব যে খুব বেশি ছিল তাহাও নহে— কিন্তু নূতন-আলাপী মাত্রকেই এটা দেখাইতে হইবে সেটা ধরা কথা। পরেশ প্রথম-প্রথম আপত্তি করিতেন কিন্তু সম্পূর্ণ নিস্ফল জানিয়া এখন আর আপত্তিও করেন না। এই পশমের টিয়াপাখির রচনানৈপুণ্য লইয়া যখন বিনয় দুই চক্ষু বিস্ময়ে বিস্ফারিত করিয়াছে তখন বেহারা আসিয়া একখানি চিঠি পরেশের হাতে দিল।

 চিঠি পড়িয়া পরেশ প্রফুল্ল হইয়া উঠিলেন; কহিলেন, “বাবুকে উপরে নিয়ে আয়।”

 বরদা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে।”

 পরেশ কহিলেন, “আমার ছেলেবেলাকার বন্ধু কৃষ্ণদয়াল তাঁর ছেলেকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করবার জন্যে পাঠিয়েছেন।”

 হঠাৎ বিনয়ের হৃৎপিণ্ড লাফাইয়া উঠিল এবং তাহার মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। তাহার পরক্ষণেই সে হাত মুঠা করিয়া বেশ একটু শক্ত হইয়া বসিল, যেন কোনো প্রতিকুল পক্ষের বিরুদ্ধে সে নিজেকে দৃঢ় রাখিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া উঠিল। গোরা যে এই পরিবারের লোকদিগকে অশ্রদ্ধার সহিত দেখিবে ও বিচার করিবে, ইহা আগে হইতেই বিনয়কে যেন কিছু উত্তেজিত করিয়া তুলিল।

১০

খুঞ্চের উপর জলখাবার ও চায়ের সরঞ্জাম সাজাইয়া চাকরের হাতে দিয়া সুচরিতা ছাতে আসিয়া বসিল এবং সেই মুহূর্তে বেহারার সঙ্গে গোরাও

৬০