হাসিয়া উঠিতেছিল এবং বাঙালিটিও তাহার সঙ্গে যোগ দিতেছিল।
দুই-তিনটা স্টেশন এইরূপে পার হইলে গোরার অসহ্য হইয়া উঠিল। সে উপরে উঠিয়া তাহার বজ্রগর্জনে কহিল, “ধিক্ তোমাদের! লজ্জা নাই।”
ইংরেজটা কঠোর দৃষ্টিতে গোরার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিল। বাঙালি উত্তর দিল, “লজ্জা! দেশের এই-সমস্ত পশুবৎ মৃঢ়দের জন্যই লজ্জা।”
গোরা মুখ লাল করিয়া কহিল, “মূঢ়ের চেয়ে বড় পশু আছে— যার হৃদয় নেই।”
বাঙালি রাগ করিয়া কহিল, “এ তোমার জায়গা নয়— এ ফার্স্ট্ ক্লাস।”
গোরা কহিল, “না, তোমার সঙ্গে একত্রে আমার জায়গা নয়— আমার জায়গা ওই যাত্রীদের সঙ্গে। কিন্তু, আমি বলে যাচ্ছি, আর আমাকে তোমাদের এই ক্লাসে আসতে বাধ্য কোরো না।”
বলিয়া গোরা হন্ হন্ করিয়া নীচে চলিয়া গেল। ইংরেজ তাহার পর হইতে আরাম-কেদারার দুই হাতায় দুই পা তুলিয়া নভেল পড়ায় মনোনিবেশ করিল। তাহার সহযাত্রী বাঙালি তাহার সঙ্গে পুনরায় আলাপ করিবার চেষ্টা দুই-একবার করিল, কিন্তু আর তাহা তেমন জমিল না। দেশের সাধারণ লোকের দলে সে নহে, ইহা প্রমাণ করিবার জন্য খান্সামাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, মুরগির কোনো ডিশ আহারের জন্য পাওয়া যাইবে। কি না।
খান্সামা কহিল, “না, কেবল রুটি মাখন চা আছে।”
শুনিয়া ইংরেজকে শুনাইয়া বাঙালিটি ইংরেজি ভাষায় কহিল, “creature comforts সম্বন্ধে জাহাজের সমস্ত বন্দোবস্ত অত্যন্ত যাচ্ছেতাই।”
ইংরেজ কোনো উত্তর করিল না। টেবিলের উপর হইতে তাহার খবরের কাগজ উড়িয়া নীচে পড়িয়া গেল। বাবু চৌকি হইতে উঠিয়া কাগজখানা তুলিয়া দিল কিন্তু থ্যাঙ্ক্স্ পাইল না।
চন্দননগরে পৌছিয়া নামিবার সময় সাহেব সহসা গোরার কাছে গিয়া টুপি একটু তুলিয়া কহিল, “নিজের ব্যবহারের জন্য আমি লজ্জিত— আশা
৬২