পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 গোরা। যে ডালে সকলে মিলে বসে আছি সে ডাল কাটলেই বা দোষ কী।

 সুচরিতা মনে মনে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া কহিল, “মা, মিছে তর্ক করে লাভ কী। উনি আমাদের ছোঁওয়া খাবেন না।”

 গোরা সুচরিতার মুখের দিকে তাহার প্রখর দৃষ্টি একবার স্থাপিত করিল। সুচরিতা বিনয়ের দিকে চাহিয়া ঈষৎ সংশয়ের সহিত কহিল, “আপনি কি—”

 বিনয় কোনোকালে চা খায় না, মুসলমানের তৈরি পাউরুটি-বিস্কুট খাওয়াও অনেক দিন ছাড়িয়া দিয়াছে, কিন্তু আজ তাহার না খাইলে নয়। সে জোর করিয়া মুখ তুলিয়া বলিল, “হাঁ, খাব বই-কি।” বলিয়া গোরার মুখের দিকে চাহিল। গোরার ওষ্ঠপ্রান্তে ঈষৎ একটু কঠোর হাসি দেখা দিল। বিনয়ের মুখে চা তিতো ও বিস্বাদ লাগিল, কিন্তু সে খাইতে ছাড়িল না। বরদাসুন্দরী মনে মনে বলিলেন, ‘আহা, এই বিনয় ছেলেটি বড়ো ভালো।

 তখন তিনি গোরার দিক হইতে একেবারেই মুখ ফিরাইয়া বিনয়ের প্রতি মনোনিবেশ করিলেন। তাই দেখিয়া পরেশ আস্তে আস্তে গোরার কাছে তাঁহার চৌকি টানিয়া লইয়া তাহার সঙ্গে মৃদুস্বরে আলাপ করিতে লাগিলেন।

 এমন সময় রাস্তা দিয়া চীনাবাদামওয়ালা গরম চীনাবাদাম-ভাজা হাঁকিয়া যাইতেই লীলা হাততালি দিয়া উঠিল, কহিল,“সুধীরদা, চীনেবাদাম ডাকো।”

 বলিতেই ছাতের বারান্দা ধরিয়া সতীশ চীনাবাদামওয়ালাকে ডাকিতে লাগিল।

 ইতিমধ্যে আর-একটি ভদ্রলোক আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহাকে সকলেই পানুবাবু বলিয়া সম্ভাষণ করিল, কিন্তু তাঁহার আসল নাম হারানচন্দ্র নাগ। দলের মধ্যে ইঁহার বিদ্বান ও বুদ্ধিমান বলিয়া বিশেষ খ্যাতি আছে। যদিও স্পষ্ট করিয়া কোনো পক্ষই কোনো কথা বলে নাই, তথাপি ইঁহার সঙ্গেই সুচরিতার বিবাহ হইবে, এই প্রকারের একটা সম্ভাবনা আকাশে ভাসিতেছিল। পানুবাবুর হৃদয় যে সুচরিতার প্রতি আকৃষ্ট হইয়াছিল