পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 সুচরিতা ভিতরে ভিতরে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়াছিল, তাই সে ধৈর্য সম্বরণ করিতে পারিল না; কহিল, “বাবা যদি সে নিয়ম মানতেন তা হলে তো আপনার সঙ্গেও আমাদের আলাপ হতে পারত না।”

 হারান কহিলেন, “আলাপ-পরিচয় নিজেদের সমাজের মধ্যেই বদ্ধ হলে ভালো হয়।”

 পরেশ হাসিয়া কহিলেন, “আপনি পারিবারিক অন্তঃপুরকে আরএকটুখানি বড়ো করে একটা সামাজিক অন্তঃপুর বানাতে চান। কিন্তু আমি মনে করি, নানা মতের ভদ্রলোকের সঙ্গে মেয়েদের মেশা উচিত; নইলে তাদের বুদ্ধিকে জোর করে খর্ব রাখা হয়। এতে ভয় কিম্বা লজ্জার কারণ তো কিছুই দেখি নে।”

 হারান। ভিন্ন মতের লোকের সঙ্গে মেয়ের মিশবে না এমন কথা বলি নে, কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে কিরকম ব্যবহার করতে হয় সে ভদ্রতা যে এরা জানেন না।

 পরেশ। না, না, বলেন কী! ভদ্রতার অভাব আপনি যাকে বলছেন সে একটা সংকোচ মাত্র— মেয়েদের সঙ্গে না মিশলে সেটা কেটে যায় না।

 সুচরিতা উদ্ধতভাবে কহিল, “দেখুন পানুবাবু, আজকের তর্কে আমাদের সমাজের লোকের ব্যবহারেই আমি লজ্জিত হচ্ছিলুম।”

 ইতিমধ্যে লীলা দৌড়িয়া আসিয়া ‘দিদি’ ‘দিদি’ করিয়া সুচরিতার হাত ধরিয়া তাহাকে ঘরে টানিয়া লইয়া গেল।

১১

সেদিন তর্কে গোরাকে অপদস্থ করিয়া সুচরিতার সম্মুখে নিজের জয়পতাকা তুলিয়া ধরিবার জন্য হারানের বিশেষ ইচ্ছা ছিল, গোড়ায় সুচরিতাও তাহাই আশা করিয়াছিল। কিন্তু, দৈবক্রমে ঠিক তাহার বিপরীত ঘটিল। ধর্মবিশ্বাস ও সামাজিক মতে সুচরিতার সঙ্গে গোরার মিল ছিল

৭৩