উক্ত গৌরমোহনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন বন্ধু।”
গোরা। কিন্তু গৌরমোহন এতই বেহায়া যে, সে তার কুসংস্কারের জন্য কারও কাছে কোনোদিন লজ্জা বোধ করে না।
বিনয়। বিনয়ও ঠিক তদ্রুপ। তবে কিনা সে নিজের সংস্কার নিয়ে তেড়ে অন্যকে আক্রমণ করতে যায় না।
দেখিতে দেখিতে দুই বন্ধুতে তুমুল তর্ক বাধিয়া উঠিল। পাড়াসুদ্ধ লোক বুঝিতে পারিল— আজ গোরার সঙ্গে বিনয়ের সাক্ষাৎ ঘটিয়াছে।
গোরা কহিল, “তুমি যে পরেশবাবুর বাড়িতে যাতায়াত করছ, সে কথা সেদিন আমার কাছে অস্বীকার করার কী দরকার ছিল?”
বিনয়। কোনো দরকার-বশত অস্বীকার করি নি— যাতায়াত করি নে বলেই অস্বীকার করেছিলুম। এতদিন পরে কাল প্রথম তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেছি।
গোরা। আমার সন্দেহ হচ্ছে, অভিমন্যুর মতো তুমি প্রবেশ করবার রাস্তাই জান, বেরোবার রাস্তা জান না।
বিনয়। তা হতে পারে— ওইটে হয়তো আমার জন্মগত প্রকৃতি। আমি যাকে শ্রদ্ধা করি বা ভালোবাসি তাকে আমি ত্যাগ করতে পারি নে। আমার এই স্বভাবের পরিচয় তুমিও পেয়েছ।
গোরা। এখন থেকে তা হলে ওখানে যাতায়াত চলতে থাকবে?
বিনয়। একলা আমারই যে চলতে থাকবে এমন কী কথা আছে? তোমারও তো চলৎশক্তি আছে, তুমি তো স্থাবর পদার্থ নও।
গোরা। আমি তো যাই এবং আসি, কিন্তু তোমার যে লক্ষণ দেখলুম তুমি যে একেবারে যাবারই দাখিল। গরম চা কী রকম লাগল?
বিনয়। কিছু কড়া লেগেছিল।
গোরা। তবে?
বিনয়। না খাওয়াটা তার চেয়ে বেশি কড়া লাগত।
গোরা। সমাজপালনটা তা হলে কি কেবলমাত্র ভদ্রতাপালন?
৮৫