পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তাহার মনের ভিতরে ভিতরে একটা ক্লেশ হইতেছিল। সে পকেট হইতে ছুরি বাহির করিয়া আলুর খোসা ছাড়াইতে বসিয়া গেল।

 মিনিট পনেরো পরে নীচে গিয়া দেখিল, গোরা অবিনাশকে লইয়া বাহির হইয়া গেছে। গোরার ঘরে বিনয় অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। তাহার পরে খবরের কাগজ হাতে লইয়া শূন্যমনে বিজ্ঞাপন দেখিতে লাগিল। তাহার পর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বাহির হইয়া চলিয়া গেল।


১৩

মধ্যাহ্নে গোরার কাছে যাইবার জন্য বিনয়ের মন আবার চঞ্চল হইয়া উঠিল। বিনয় গোরার কাছে নিজেকে নত করিতে কোনোদিন সংকোচ বোধ করে নাই। কিন্তু নিজের অভিমান না থাকিলেও বন্ধুত্বের অভি- মানকে ঠেকানো শক্ত। পরেশবাবুর কাছে ধরা দিয়া বিনয় গোরার প্রতি তাহার এতদিনকার নিষ্ঠায় একটু যেন খাটো হইয়াছে বলিয়া অপরাধ অনুভব করিতেছিল বটে, কিন্তু সেজন্য গোরা তাহাকে পরিহাস ও ভর্ৎসনা করিবে এই পর্যন্তই আশা করিয়াছিল, তাহাকে যে এমন করিয়া ঠেলিয়া রাখিবার চেষ্টা করিবে তাহা সে মনেও করে নাই। বাসা হইতে খানিকটা দূর বাহির হইয়া বিনয় আবার ফিরিয়া আসিল; বন্ধুত্ব পাছে অপমানিত হয়, এই ভয়ে সে গোরার বাড়িতে যাইতে পারিল না।

 মধ্যাহ্নে আহারের পর গোরাকে একখানা চিঠি লিখিবে বলিয়া কাগজ- কলম লইয়া বিনয় বসিয়াছে; বসিয়া অকারণে কলমটাকে ভোঁতা অপবাদ দিয়া একটা ছুরি লইয়া অতিশয় যত্নে একটু একটু করিয়া তাহার সংস্কার করিতে লাগিয়াছে, এমন সময় নীচে হইতে ‘বিনয়’ বলিয়া ডাক আসিল। বিনয় কলম ফেলিয়া তাড়াতাড়ি নীচে গিয়া বলিল, “মহিমদাদা, আসুন, উপরে আসুন।”

 মহিম উপরের ঘরে আসিয়া বিনয়ের খাটের উপর বেশ চৌকা হইয়া

৮৮