পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গৌড়রাজমালা।

গৌড়েশ্বর কুমারপালের সময়ে, দক্ষিণ বঙ্গে স্বাতন্ত্র্য অবলম্বনে যত্নবান্ হইয়াছিলেন, এবং তাঁহার দমনার্থ প্রেরিত বৈদ্যদেবকর্ত্তৃক নৌ-যুদ্ধে পরাভূত হইয়াছিলেন। কুমারপালের মৃত্যুর পর, জ্যোতিবর্ম্মার অভিলাষপূরণের আর কোন বাধা ছিল না। আদিদেবের পুত্র গোবর্দ্ধন যুদ্ধক্ষেত্রে [বীরস্থলীষু] বাহুবলে রাজ্য বিস্তার করিয়াছিলেন [বর্দ্ধয়ন্ বসুমতী;] বলিয়া কথিত হইয়াছেন; কিন্তু তিনি কখন মন্ত্রিপদ লাভ করিয়াছিলেন, এরূপ কোনও প্রমাণ নাই। গোবর্দ্ধন হয়ত জ্যোতিবর্ম্মা বা হরিবর্ম্মার একজন সেনানায়ক ছিলেন, এবং পিতার জীবদ্দশায় পরলোক গমন করায়, মন্ত্রিপদে উন্নীত হইবার অবসর পাইয়াছিলেন না। সুতরাং আদিদেবের মৃত্যুর পর, ভট্টভবদেব বালবলভীভুজঙ্গ হরিবর্ম্মার মন্ত্রিপদ লাভ করিয়াছিলেন; এবং হরিবর্ম্মার মৃত্যুর পর, তাঁহার অনুল্লিখিতনামা পুত্রের এবং উত্তরাধিকারীর সময়েও, সেই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রশস্তিকার বাচস্পতি ১৮টি শ্লোকে ভবদেব বালবলভীভুজঙ্গের গুণগ্রামের এবং কীর্ত্তিকলাপের বর্ণন করিয়াছেন; তিনি কি কি গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন, তাহারও পরিচয় দিয়াছেন। কিন্তু ভবদেবের বাহুবলে এবং নীতিকৌশলে তাঁহার প্রভুর রাজ্য কতটা উন্নতি এবং বিস্তৃতি লাভ করিয়াছিল, এই সুদীর্ঘ প্রশস্তিমধ্যে তাহার কোনও উল্লেখ নাই। ইহাতে অনুমান হয়, সেনবংশের অভ্যুদয়ের পর, ভবদেব স্বীয় প্রভুকে সেনবংশীয় গৌড়াধিপের অধীনতা স্বীকারে উপদেশ দিয়া, স্বয়ং অগস্ত্যবৎ বৌদ্ধাম্ভোনিধি-গণ্ডুষকরণে, পাষণ্ড-তার্কিক-দলনে, এবং স্মৃতি, জ্যোতিষ, এবং মীমাংসা-শাস্ত্রের চর্চ্চায়, মনোনিবেশ করিয়ছিলেন।

 বর্ম্মবংশের অভ্যুদয় এবং মদনপালের দুর্ব্বলতা নিবন্ধন গৌড়রাষ্ট্র যখন বিশৃঙ্খল হইয়া পড়িয়াছিল, তখন সামন্তসেনের পৌত্র [হেমন্তসেন ও রাজ্ঞী যশোদেবীর পুত্র] বিজয়সেন বরেন্দ্রভূমিতে একটি স্বতন্ত্র রাজ্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। হেমন্তসেন একজন বড় যোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু তিনি বাহুবলে গৌড়রাজ্যের কোন অংশ করতলগত করিতে পারিয়াছিলেন কি না, তাহা বলা যায় না। হেমন্তসেনের পুত্র বিজয়সেন, রাঢ়ে এবং বঙ্গে, বর্ম্ম-রাজের সহিত প্রতিযোগিতা করিতে অসমর্থ হইয়াই, সম্ভবত স্বীয় অভিলাষ চরিতার্থ করিবার জন্য, বরেন্দ্র-অভিমুখে ধাবিত হইয়াছিলেন। অথবা হেমন্তসেনই হয়ত বরেন্দ্রে আশ্রয় লইয়াছিলেন, এবং পরে সুযোগ পাইয়া, বিজয়সেন তথায় স্বতন্ত্র রাজ্য-স্থাপনে ব্রতী হইয়াছিলেন। বল্লালসেন “দানসাগরের” ভূমিকায় লিখিয়া গিয়াছেন—

तदनु विजयसेनः प्रादुरासीत् वरेन्द्रे”

 “(হেমন্তসেনের) পর বিজয়সেন বরেন্দ্রে প্রাদুর্ভূত হইয়াছিলেন।”

 বিজয়সেনের অভ্যুদয়কাল সম্বন্ধে পণ্ডিতগণের মধ্যে অনেক মতভেদ আছে। কিল্‌হর্ণের অনুসরণ করিয়া, সামন্তসেনকে খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর চতুর্থ পাদে, হেমন্তসেনকে দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম পাদে, এবং বিজয়সেনকে দ্বিতীয় পাদে [আনুমানিক ১১২৫–১১৫০ খৃষ্টাব্দে] স্থাপিত

৬০