আমি যখন তোমাদের মত ছোট ছিলাম তখন একবার বৃহস্পতির চাঁদ দেখিয়াছিলাম,—তার পরে এই বুড়ো বয়সে সেগুলিকে অনেক বার দেখিয়াছি; কিন্তু যখনি দেখিয়াছি তখনি অবাক্ হইয়াছি। আমাদের কাছ হইতে দূরে পৃথিবীরই মত একটা গ্রহ আছে এবং তাহার চারিদিকে অনেকগুলি চাঁদ ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, ইহা দেখিলে আশ্চর্য্য না হইয়া থাকা যায় কি?
কেবল ইহাই নয়, দূরবীণ দিয়া যদি তোমরা বৃহস্পতিকে দেখিতে পার, তাহা হইলে স্পষ্ট জানিতে পারিবে, উহার প্রথম চাঁদটি ঘুরিতে ঘুরিতে দুই ঘণ্টা কুড়ি মিনিট অন্তর এবং দ্বিতীয় চাঁদটি প্রায় তিন ঘণ্টা অন্তর এক এক বার বৃহস্পতির পিছনে লুকাইতেছে এবং কিছুক্ষণ পরে আবার হঠাৎ বাহির হইয়া পড়িতেছে। চাঁদগুলির মধ্যে কোন্টি কখন বৃহস্পতির পিছনে লুকাইবে তাহা ইংরাজি পাঁজিতে (Nautical Almanac) লেখা থাকে। পাঁজির সময়ের সঙ্গে মিলাইয়া এই রকম গ্রহণ দেখা, বড় মজার।
আমাদের চাঁদটি কত বড় তোমরা তাহা আগেই শুনিয়াছ। জ্যোতিষীরা হিসাব করিয়া দেখিয়াছেন, বৃহস্পতির প্রথম চারিটি চাঁদ আমাদের চাঁদের মত বড় এবং পৃথিবীর চাঁদের মত তাহাদেরো ক্ষয়বৃদ্ধি অমাবস্যা-পূর্ণিমা আছে।
বৃহস্পতির বাকি চারটি চাঁদ খুবই ছোট। ভাল দূরবীণ দিয়াও তাহাদিগকে দেখা দায়। তাই পঁচিশ বৎসর পূর্ব্বে ইহাদের কথা জ্যোতিষীরা জানিতেন না। আমেরিকার লিক্ মানমন্দিরের বড় দূরবীণটি খাটানো হইলে, তাহা দিয়াই ইংরাজি ১৮৯২ সালে বৃহস্পতির পঞ্চম চাঁদের সন্ধান পাওয়া গিয়াছিল। তার পরে ক্রমে ক্রমে আর তিনটির সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। এই রকমে অল্প দিনের মধ্যে চারটি বদলে বৃহস্পতির চাঁদ এখন আটটি হইয়া দাঁড়াইয়াছে।