পাঠাইয়া দিলেন। ইনি হিসাব হাতে পাইয়াই তাহা পরীক্ষা করিতে লাগিলেন এবং বুঝিলেন, যুবক লিভেরিয়ার সামান্য লোক নয়।
অজানা গ্রহটিকে আকাশের কোন্ জায়গায় দেখা যাইবে, তাহা লিভেরিয়ারের কাগজ-পত্রে লেখা ছিল। গল্ সাহেব ইংরাজি ১৮৪৬ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর রাত্রিতে তাঁহার বড় দূরবীণ দিয়া গ্রহটির খোঁজ করিতে লাগিলেন। কিন্তু অধিক কষ্ট পাইতে হইল না; একটু খোঁজ করার পরেই, সেই অজানা গ্রহ দূরবীণে ধরা দিল। আকাশের দিকে না তাকাইয়া কেবল অঙ্ক কষিয়া লিভেরিয়ার যাহার কথা লিখিয়া পাঠাইয়াছিলেন, গল্ সাহেব এই রকমে তাহাকে নিজের চক্ষে দেখিলেন! লিভেরিয়ারের কথা ভবিষ্যদ্বাণীর মত সত্য হইয়া গেল! সেই নূতন গ্রহটিই এখন আমাদের কাছে নেপ্চুন্ নামে পরিচিত হইতেছে।
নেপ্চুন্-আবিষ্কারের খবর পৃথিবীময় ছড়াইয়া পড়িলে, জ্যোতিষীদর মনে যে কি আনন্দ হইয়াছিল, তাহা বোধ হয় তোমরা বুঝিতেই পারিতেছ। কিন্তু ইংলণ্ডের রাজ-জ্যোতিষী এই আনন্দে যোগ দিতে পারেন নাই। আবিষ্কারের খবর জানিবা মাত্র তাঁহার মনে পড়িয়া গেল, যুবক আডাম্সের একটা হিসাব তাঁহার কাছে আছে। তিনি এই হিসাব অনুসারে তাড়াতাড়ি দূরবীণ দিয়া নূতন গ্রহের সন্ধান করিতে লাগিলেন এবং অনায়াসে নেপ্চুন্কে দেখিতে পাইলেন। তখন রাজ-জ্যোতিষীর মনে হইতে লাগিল, আডামস্ সাহেবের হাতে হিসাব পড়িবা মাত্র যদি তিনি নূতন গ্রহের সন্ধান করিতেন, তাহা হইলে নেপ্চুন্-আবিষ্কারের সম্মান ফরাসী লিভেরিয়ারের ভাগ্যে না পড়িয়া, ইংরাজ আডাম্সের ভাগ্যেই পড়িত এবং ইহাতে ইংলণ্ডেরই গৌরব বৃদ্ধি হইত।
যাহা হউক, শত শত বৎসর গ্রহনক্ষত্রদের হিসাব করিয়া যাহা কখনো দেখা যায় নাই, নেপ্চুনের আবিষ্কারে তাহাই দেখা গিয়াছিল। এই জন্য ঘটনাটি জ্যোতিষের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে।