পাতা:গ্রহ-নক্ষত্র.pdf/২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
আমাদের পৃথিবী
১১

ক্রমাগত না ঘুরিয়া স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া থাকিত, তাহা হইলে চিরদিন ধরিয়া উহার এক অংশের উপরেই আলো পড়িত। কিন্তু লাট্টু স্থির নাই; কাজেই যে আধখানায় এখন আলো পড়িতেছে, একটু পরে তাহাই পিছনে গিয়া অন্ধকারে ডুবিতছে এবং যাহা পিছনের অন্ধকারে ছিল, তাহা ল্যাম্পের সম্মুখে আসিয়া আলোকিত হইতেছে।

 এখন লাট্টুর আলোয় থাকাকে যদি দিন ধরা যায় এবং অন্ধকারে যাওয়াকে রাত্রি বলা যায়, তাহা হইলে স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে, লাট্টুর প্রত্যেক অংশে একবার দিন হইয়া একটু পরেই রাত্রি হইতেছে। আমাদের পৃথিবী একটা বড় লাট্টুর মত ঘুরপাক খাইতেছে এবং সূর্য্য মাঝখানে দাঁড়াইয়া একটা প্রকাণ্ড ল্যাম্পের মত আলো দিতেছে। কাজেই পৃথিবীর প্রত্যেক অংশ একবার আলোকিত হইয়া যে, পরে অন্ধকারে ডুবিতেছে, তাহা সহজে বুঝা যায় না কি? ঠিক্ এই রকমেই দিনের পর রাত্রি এবং রাত্রির পর দিন চিরকাল ধরিয়া পৃথিবীতে চলিয়া আদিতেছে। পৃথিবী একবার ঘুরপাক দিতে চবিশ ঘণ্টা সময় লয়। এই জন্য আমাদের দিনরাত্রির পরিমাণ চব্বিশ ঘণ্টা।

 ছবিতে লাট্টু তাহার হুলের উপরে ঠিক্ সোজা হইয়া ঘুরিতেছে না; পৃথিবীও তাহার মেরুদণ্ডের উপরে ঠিক্ সোজা হইয়া ঘুরে না। তোমাদের থেলার লাট্টু যেমন কখনো কখনো ঘাড় বাঁকাইয়া ঘুরে, পৃথিবী ঠিক্ সেই-রকমই ঘাড় বাঁকাইয়া ঘুরপাক খায়। গ্রীষ্মকালের দিন যে কিরূপ দীর্ঘ এবং শীতকালের রাত্রি যে কত বড়, তাহা তোমরা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। পৃথিবী তাহার মেরুদণ্ডের উপরে বাঁকিয়া ঘুরপাক খায় বলিয়াই, দিন-রাত্রির পরিমাণের এইরকম কমিবেশি হয়। তা ছাড়া, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর যে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত্রির কথা তোমরা গল্পে শুনিয়াছ, তাহাও পৃথিবী ঘাড় বাঁকাইয়া ঘুরে বলিয়া হয়।