পাতা:গ্রহ-নক্ষত্র.pdf/৪৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সূর্য্য
২৭

 দূরবীণ দিয়া সূর্য্যকে দেখিলে ইহার প্রথম আবরণটা স্পষ্ট দেখা যায়। পৃথিবীর বাষ্প-আবরণকে আমরা যেমন বায়ুমণ্ডল বলি, জ্যোতিষীরা সূর্য্যের এই প্রথম বাষ্প-আবরণকে আলোক-মণ্ডল (Photosphere) বলেন। সূর্য্যের যত আলো এই আলোক-মণ্ডল হইতে আসিয়া আমাদের কাছে পৌঁছায়। আমাদের নদী-সমুদ্রের জল যেমন বাষ্প হইয়া আকাশের উপরে উঠে এবং সেখানে ঠাণ্ডা হইয়া মেঘ উৎপন্ন করে, জ্যোতিষীরা বলেন, সূর্য্যের আলোকমণ্ডল ঐ মেঘেরই মত কিছু। সূর্য্যের দেহের জ্বলন্ত বাষ্প উপরে উঠিয়া একটু জমাট বাঁধিয়া গেলে আলোক-মণ্ডলের সৃষ্টি হয়।

 কিন্তু আমাদের মেঘ যেমন আলো দেয় না এবং তাপও দেয় না, সূর্য্যের আকাশের মেঘ সেই-রকম নয়। উহা সর্ব্বদাই উজ্জ্বল থাকে এবং খুব তাপ দেয়। সূর্য্যের আলোক-মণ্ডলে যে মেঘের মত জিনিসই অধিক আছে, দূরবীণ দিয়া দেখিলে তাহা বুঝা যায়। দূরবীণে আলোক-মণ্ডলের সকল অংশকে সমান উজ্জ্বল দেখায় না। ড্রয়িং কাগজকে যেমন দানা-দানা উঁচু-নীচু দেখায়, সূর্য্যের আলোক-মণ্ডলকে দেখিতে কতকটা সেই রকম; জ্বলন্ত মেঘগুলি সূর্য্যের আকাশে ভাসিয়া ভাসিয়া ঐ রকম উজ্জ্বল দানাগুলির সৃষ্টি করে।

 আমাদের বায়ুমণ্ডলের বড় বড় ঝড়ে কত গাছ উল্‌টাইয়া যায়, কত বাড়ী পড়িয়া যায়, তাহা তোমরা দেখিয়াছ। সূর্য্যের আলোক-মণ্ডলেও প্রায়ই ঝড় হয়। লক্ষ লক্ষ মাইল ব্যাপিয়া এই ঝড় পনেরো দিন, কুড়ি দিন, কখনো কখনো এক মাস ধরিয়া চলিতে থাকে। আগুনের মত জ্বলন্ত বাষ্পরাশি এই রকমে আলোড়িত হইয়া সূর্য্য-লোকে কি ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড উপস্থিত করে, মনে করিয়া দেখ।