পাতা:গ্রাম্য উপাখ্যান - রাজনারায়ণ বসু.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গ্ৰাম্য উপাখ্যান ।

দেখিয়াছিলাম, কিন্তু এক্ষণে সেরূপ নাই। এক্ষণে বাদল গ্রামে যে কয় জন লোক আছেন তাঁহারা মেলেরিয়া প্রপীড়িত এবং তাঁহাদের শরীর কঙ্কালাবশিষ্ট; আবার সেই সকল কঙ্কলাবশিষ্ট লোক দিবা রাত্রি উপজীবিকা চিন্তায় জর্জ্জরিত। আমাদের বাল্যকালে প্রত্যহ সন্ধ্যার পূর্ব্বে গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিরা এক একটা পাগড়ি মাথায় বাঁধিয়া প্রকাণ্ড বৃক্ষতলে শপে বসিয়া যেরূপ গল্প করিতেন, বাদল গ্রামে সেরূপ দৃশ্য এক্ষণে আর দেখা যায় না। পূর্ব্বে জিনিস পত্র অল্প—মূল্য ছিল, তজ্জন্য লোকের এত উদ্বেগ ছিল না। আমরা শুনিয়াছি পূর্ব্বে জামাই বাটী আসিলে লোকে এক পণ কড়ি লইয়া বাজার করিতে যাইত, তাহাতেই কুলান হইত। এক্ষণে স্বাধীন বাণিজ্যের উৎপাতে দ্রব্যাদি সেরূপ অল্প-মূল্য নাই, তাহার উপর আবার মেলেরিয়ার উৎপাত; আর কি রক্ষা আছে? হে বাদল! তোমার বর্ত্তমান দুর্দ্দশা দর্শন করিলে চক্ষে জল আইসে। আহা! কোথায় সে আনন্দোৎসব? কোথায় সে আমোদ প্রমোদ! কোথায় সে বালকদিগের ক্রীড়া কৌতুক! সকলই স্বপ্নের ন্যায় অন্তর্হিত হইয়াছে।

 আমরা প্রস্তাবান্তরে প্রথমে বাদলগ্রামের ভৌগোলিক বিবরণ দিয়া সে কালের কথা স্মরণ পূর্ব্বক ক্রমান্বয়ে ঐ গ্রামবাসী মানুষ্যের এক একটা চিত্র পাঠকবর্গকে উপহার দিবার মানস করি।