লাগাইতেন। পাঠক দেখুন এক্ষণকার লোকে একটা শ্যাল তাড়াইতে সক্ষম হয় না। আর সে কালের লোক কেমন সাহসী ছিল। ছেলেবেলা আমাদিগের বাটীতে দেখিয়াছি লাঠি, সোটা, তলওয়ার, টাঙ্গি ঘরের দেওয়ালের উপর ঝোলান থাকিত, অস্ত্র ব্যবহার নিষেধের সঙ্গে সঙ্গে আমাদিগের জাতির যাহা কিছু বীর্য্য ছিল, তাহা আমরা হারাইতেছি। ইদানীন্তন রামপ্রসাদ বসুর বিলক্ষণ অর্থ কষ্ট হইয়াছিল। তিনি পাণ্ডুরোগের ঔষধ বিক্রয় করিতে বাধ্য হন। ঐ সময়ে পাণ্ডুরোগের ঔষধ বিক্রয়ের দরুণ টাকা মাত্র তাঁহার জীবনোপায় ছিল। এক দিন একটী মাত্র টাকা হাতে আছে এমন সময়ে গ্রামের কোন ব্রাহ্মণ আসিয়া বলিলেন, “কল্য আমাদিগের আহার হয় নাই। হাতে কিছু নাই।” তিনি বলিলেন, “আমার হাতে একটী টাকা মাত্র আছে তাহা তুমি লইয়া যাও।” ব্রাহ্মণ তাহা লইতে কোন মতে সন্মত হইলেন না। তিনি জোর করিয়া তাঁহাকে সেই টাকাটী দিলেন। কিন্তু বলিয়া দিলেন, “ছোট গিন্নি (তাহার দ্বিতীয় স্ত্রী) যাহাতে তাহা টের না পান এমন করিয়া লইয়া যাও। সে জানিতে পারিলে আমাকে গালি দিয়া ভূত ছাড়া করিবে। আমার নিজের জন্য কোন ভাবনা করি না, ঈশ্বর আছেন।” এই স্বার্থপরতাপূর্ণ ধর্ম্মশূন্য সভ্যতার কালে এরূপ দানশক্তি ও ঈশ্বরের প্রতি নির্ভর ভাব কয়টা লোকে প্রকাশ করিতে সক্ষম হয়?
পাতা:গ্রাম্য উপাখ্যান - রাজনারায়ণ বসু.pdf/৯৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গ্ৰাম্য উপাখ্যান ।
৪৭
