পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জ্যাঠামশায়
২৫

কাঁদিতে লাগিল।

 জগমোহনের চোখে সহজে জল আসে না; তাঁর চোখ ছল‍্ছল্ করিয়া উঠিল। তিনি শচীশকে বলিলেন, “শচীশ, এই মেয়েটি আজ যে লজ্জা বহন করিতেছে সে যে আমার লজ্জা, তোমার লজ্জা। আহা, ওর উপরে এতবড়ো বোঝা কে চাপাইল।”

 “মা, আমার কাছে তোমার লজ্জা খাটিবে না— আমাকে আমার স্কুলের ছেলেরা পাগলা জগাই বলিত, আজও আমি সেই পাগল আছি।”— বলিয়া জগমোহন নিঃসংকোচে মেয়েটির দুই হাত ধরিয়া মাটি হইতে তাকে দাঁড় করাইলেন; মাথা হইতে তার ঘোমটা খসিয়া পড়িল।

 নিতান্ত কচি মুখ, অল্প বয়স, সে মুখে কলঙ্কের কোনো চিহ্ন পড়ে নাই। ফুলের উপরে ধুলা লাগিলেও যেমন তার আন্তরিক শুচিতা দূর হয় না তেমনি এই শিরীষফুলের মতো মেয়েটির ভিতরকার পবিত্রতার লাবণ্য তত ঘোচে নাই। তার দুই কালো চোখের মধ্যে আহত হরিণীর মতো ভয়, তার সমস্ত দেহলতাটির মধ্যে লজ্জার সংকোচ, কিন্তু এই সরল সকরুণতার মধ্যে কালিমা তো কোথাও নাই।

 ননিবালাকে জগমোহন তাঁর উপরের ঘরে লইয়া গিয়া বলিলেন, “মা, এই দেখো আমার ঘরের স্ত্রী। সাতজন্মে ঝাঁট পড়ে না; সমস্ত উলটাপালটা; আর আমার কথা যদি বল, কখন নাই, কখন খাই, তার ঠিকানা নাই। তুমি আসিয়াছ, এখন আমার ঘরের শ্রী ফিরিবে, আর পাগলা জগাইও মানুষের মতল হইয়া উঠিবে।”