একদিনও দেখা হয় নাই, তার সঙ্গে দুটা কথা হইয়াছে কি না সন্দেহ। বিবাহের কথা যখন পাকাপাকি ঠিক হইয়া গেছে তখন জগমোহন শচীশকে বলিলেন, “বিবাহের পূর্বে নিরালায় একদিন ননির সঙ্গে ভালো করিয়া কথাবার্তা কহিয়া লও, একবার দুজনের মন-জানাজানি হওয়া দরকার।”
শচীশ রাজি হইল।
জগমোহন দিন ঠিক করিয়া দিলেন। ননিকে বলিলেন, “মা, আমার মনের মতো করিয়া আজ কিন্তু তোমাকে সাজিতে হইবে।”
ননি লজ্জায় মুখ নিচু করিল।
“না মা, লজ্জা করিলে চলিবে না, আমার বড়ো মনের সাধ, আজ তোমার সাজ দেখিব— এ তোমাকে পুরাইতে হইবে।”
এই বলিয়া চুমকি-দেওয়া বেনারসি শাড়ি, জামা ও ওড়না, যা তিনি নিজে পছন্দ করিয়া কিনিয়া আনিয়াছিলেন, ননির হাতে দিলেন।
ননি গড় হইয়া পায়ের ধুলা লইয়া তাঁহাকে প্রণাম করিল। তিনি ব্যস্ত হইয়া পা সরাইয়া লইয়া কহিলেন, “এতদিনে তবু তোমায় ভক্তি ঘোচাইতে পারিলাম না। আমি নাহয় বয়সেই বড়ো হইলাম, কিন্তু মা, তুমি যে মা বলিয়া আমার বড়ো!”
এই বলিয়া তার মস্তক চুম্বন করিয়া বলিলেন, “ভবতোষের বাড়ি আমার নিমন্ত্রণ আছে, ফিরিতে কিছু রাত হইবে।”
ননি তাঁর হাত ধরিয়া বলিল, “বাবা, তুমি আজ আমাকে আশর্বাদ করো।”