পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
চতুরঙ্গ

এ চেহারা নয়।”

 শচীশ কহিল, “সে যে ছিল ডাঙার উপরকার মুক্তি, তখন কাজের ক্ষেত্রে জ্যাঠামশায় আমার হাত-পা’কে সচল করিয়া দিয়াছিলেন। আর, এ-যে রসের সমুদ্র, এখানে নৌকার বাঁধনই যে মুক্তির রাস্তা। তাই তো গুরু আমাকে এমন করিয়া চারি দিক হইতে সেবার মধ্যে আটকাইয়া ধরিয়াছেন— আমি পা টিপিয়া পার হইতেছি।”

 আমি বলিলাম, “তোমার মুখে এ কথা মন্দ শোনায় না, কিন্তু যিনি তোমার দিকে এমন করিয়া পা বাড়াইয়া দিতে পারেন তিনি—”

 শচীশ কহিল, “তাঁর সেবার দরকার নাই বলিয়াই এমন করিয়া পা বাড়াইয়া দিতে পারেন, যদি দরকার থাকিত তবে লজ্জা পাইতেন— দরকার যে আমারই।”

 বুঝিলাম, শচীশ এমন-একটা জগতে আছে আমি যেখানে একেবারেই নাই। মিলনমাত্র যে-আমাকে শচীশ বুকে জড়াইয়া ধরিয়াছিল সে-আমি শ্রীবিলাস নয়— সে-আমি ‘সর্বভূত’, সেআমি একটা আইডিয়া।

 এই ধরনের আইডিয়া জিনিসটা মদের মতো; নেশার বিহ্বলতায় মাতাল যাকে-তাকে বুকে জড়াইয়া অশ্রুবর্ষণ করিতে পারে, তখন আমিই কী আর অন্যই কী। কিন্তু এই বুকেজড়ানো তে মাতালের যতই আনন্দ থাক্‌, আমার তো নাই; আমি তত ভেদজ্ঞানবিলুপ্ত একাকারতা-বন্যার একটা ঢেউমাত্র হইতে চাই— না আমি যে আমি।