পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শচীশ
৫১

সেবার অন্ন তাকে নিজের হাতে প্রস্তুত করিতে হইয়াছে। ইচ্ছা করিয়া তরকারিতে সে খুন দেয় নাই, ইচ্ছা করিয়া দুধ ধরাইয়া দিয়াছে, তবু তার তপস্যা এমনি করিয়া চলিতে লাগিল।

 এমন সময় তার স্বামী মরিবার কালে স্ত্রীর ভক্তিহীনতার শেষ দণ্ড দিয়া গেল। সমস্ত সম্পত্তি-সমেত স্ত্রীকে বিশেষভাবে উরুর হাতে সমর্পণ করিল।

ঘরের মধ্যে অবিশ্রাম ভক্তির ঢেউ উঠিতেছে। কত দুর হইতে কত লোক আসিয়া গুরুর শরণ লইতেছে। আর, দামিনী বিনা চেষ্টায় ইহার কাছে আসিতে পারিল, অথচ সেই দুর্লভ সৌভাগ্যকে সে দিনরাত অপমান করিয়া খেদাইয়া রাখিল।

 গুরু যেদিন তাঁকে বিশেষ করিয়া উপদেশ দিতে ডাকিতেন সে বলিত, “আমার মাথা ধরিয়াছে।” যেদিন তাঁহাদের সন্ধ্যাবেলাকার আয়োজনে কোনো বিশেষ ত্রুটি সক্ষ্য করিয়া তিনি দামিনীকে প্রশ্ন করিতেন, সে বলিত, “আমি থিয়েটারে গিয়াছিলাম।” এ উত্তরটা সত্য নহে, কিন্তু কটূ। ভক্ত মেয়ের দল আসিয়া দামিনীর কাণ্ড দেখিয়া গালে হাত দিয়া বসিত। একে তো তার বেশভূষা বিধবার মত নয়, তার পরে গুরুর উপদেশবাক্যের সে কাছ দিয়া যায় না; তার পরে এতবড়ো মহাপুরুষের এত কাছে থাকিলে আপনিই যে একটি সংযমে