লোকসান ছিল না, এমন-কি, বেজির ক্ষুধানিবৃত্তির ভার স্বয়ং বেজির ’পরে রাখিলে জীবে দয়ায় অত্যন্ত ব্যত্যয় হইত না অথচ নামে রুচির পরিচয় দিতে পারিতাম। তাই হঠাৎ শচীশকে দেখিয়া অপ্রস্তুত হইতে হইল। ভাঁড়টা সেইখানে রাখিয়া আত্মমর্যাদা উদ্ধারের পন্থায় সরিয়া যাইবার চেষ্টা করিলাম।
কিন্তু, আশ্চর্য দামিনীর ব্যবহার। সে একটুও কুণ্ঠিত হইল না; বলিল, “কোথায় যান শ্রীবিলাসবাবু?”
আমি মাথা চুলকাইয়া বলিলাম, “একবার—”
দামিনী বলিল, “উহাদের গান এতক্ষণে শেষ হইয়া গেছে। আপনি বসুন-না।”
শচীশের সামনে দামিনীর এইপ্রকার অনুরোধে আমার কান দুটো ঝাঁ ঝাঁ করিতে লাগিল।
দামিনী কহিল, “বেজিটাকে লইয়া মুশকিল হইয়াছে— কাল রাত্রে পাড়ার মুসলমানদের বাড়ি হইতে ও একটা মুরগি চুরি করিয়া খাইয়াছে। উহাকে ছাড়া রাখিলে চলিবে না। শ্রীবিলাসবাবুকে বলিয়াছি একটা বড় দেখিয়া ঝুড়ি কিনিয়া আনিতে, উহাকে চাপা দিয়া রাখিতে হইবে।”
বেজিকে দুধ খাওয়ানো, বেজির ঝুড়ি কিনিয়া আনা প্রভৃতি উপলক্ষে শ্রীবিলাসবাবুর আনুগত্যটা শচীশের কাছে দামিনী যেন একটু উৎসাহ করিয়াই প্রচার করিল। যেদিন গুরুজি আমার সামনে শচীশকে তামাক সাজিতে বলিয়াছিলেন সেই দিনের কথাটা মনে পড়িল। জিনিসটা একই।