ডালপালা ছাঁটিয়া দিলেই থাকে ভালো, দামিনীর সম্বন্ধে আমি সেই জাতের মানুষ।
আমি যে লেখকের বই অনাইয়া দিলাম সে লোকটা একেবারে নির্জলা আধুনিক। তার লেখায় মনুর চেয়ে মানবের প্রভাব অনেক বেশি প্রবল। বইয়ের প্যাকেটটা গুরুজির হাতে আসিয়া পড়িল। তিনি ভুরু তুলিয়া বলিলেন, “কী হে শ্রীবিলাস, এ-সব বই কিসের জন্য।”
আমি চুপ করিয়া রহিলাম।
গুরুজি দুই-চারিটা পাতা উলটাইয়া বলিলেন, “এর মধ্যে সাত্ত্বিকতার গন্ধ তো বড়ো পাই না।”
লেখকটিকে তিনি মোটেই পছন্দ করেন না।
আমি ফস্ করিয়া বলিয়া ফেলিলাম, “একটু যদি মনোযোগ করিয়া দেখেন তো সত্যের গন্ধ পাইবেন।”
আসল কথা, ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহ জমিতেছিল। ভাবের নেশার অবসাদে আমি একেবারে জর্জরিত। মানুষকে ঠেলিয়া ফেলিয়া শুদ্ধমাত্র মানুষের হৃদয়বৃত্তিগুলাকে লইয়া দিনরাত্রি এমন করিয়া ঘাঁটাঘাঁটি করিতে আমার যতদুর অরুচি হইবার তা হইয়াছে।
গুরুজি আমার মুখের দিকে খানিকক্ষণ চাহিয়া রহিলেন, তার পরে বলিলেন, “আচ্ছা, তবে একবার মনোযোগ করিয়া দেখা যাক।”
বলিয়া বইগুলা তাঁর বালিশের নীচে রাখিলেন। বুঝিলাম, এ তিনি ফিরাইয়া দিতে চান না।