পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
চতুরঙ্গ

বৈষয়িকতার চেয়ে এটাকে অনেক বেশি নোংরা বলিয়া ভাবিতেন, পাশের বাড়ির ঘোরতর পুণ্যের হাওয়াটাকে কাটাইয়া দিবার জন্য এইরূপ ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। ইংরাজিতে তিনি ইহাকে বলিতেন, স্যানিটারি প্রিক‍্শন‍্স্।

 শচীশকে বলিলাম, “চলো, এবার সেই কলিকাতার বাড়িতে।”

 শচীশ বলিল, “এখনো তার জন্য ভালো করিয়া তৈরি হইতে পারি নাই।”

 তার কথা বুঝিতে পারিলাম না। সে বলিল, “একদিন বুদ্ধির উপর ভর করিলাম; দেখিলাম, সেখানে জীবনের সব ভার সয় না। আর-একদিন রসের উপর ভর করিলাম; দেখিলাম, সেখানে তলা বলিয়া জিনিসটাই নাই। বুদ্ধিও আমার নিজের, রসও যে তাই। নিজের উপরে নিজের দাঁড়ানো চলে না। একটা আশ্রয় না পাইলে আমি শহরে ফিরিতে সাহস করি না।”

 আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কী করিতে হইবে বলো।”

 শচীশ বলিল, “তোমরা দুজনে যাও, আমি কিছুদিন একলা ফিরিব। একটা যেন কিনারার মতো দেখিতেছি, এখন যদি তার দিশা হারাই তবে আর খুঁজিয়া পাইব না।”

 আড়ালে আসিয়া দামিনী আমাকে বলিল, “সে হয় না। একলা ফিরিবেন, উহার দেখাশুনা করিবে কে। সেই যে একবার একলা বাহির হইয়াছিলেন, কী চেহারা লইয়া ফিরিয়াছিলেন সে কথা মনে করিলে আমার ভয় হয়।”