পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীবিলাস
৯৩

 সত্য কথা বলিব? দামিনীর এই উদ‍্বেগে আমার মনে যেন একটা রাগের ভিমরুল হুল ফুটাইয়া দিল; জ্বালা করিতে লাগিল; জ্যাঠামশায়ের মৃত্যুর পর শচীশ তো প্রায় দু বছর একলা ফিরিয়াছিল; মারা তো পড়ে নাই। মনের ভাব চাপা রহিল না, একটু ঝাঁজের সঙ্গেই বলিয়া ফেলিলাম।

 দামিনী বলিল, “শ্রীবিলাসবাবু, মানুষের মরিতে অনেক সময় লাগে, সে আমি জানি। কিন্তু একটুও দুঃখ পাইতে দিব কেন, আমরা যখন আছি।”

 আমরা! বহুবচনের অন্তত আধখানা অংশ এই হতভাগা শ্রীবিলাস। পৃথিবীতে এক দলের লোককে দুঃখ হইতে বাঁচাইবার জন্য আর-এক দলকে দুঃখ পাইতে হইবে। এই দুই জাতের মানুষ লইয়া সংসার। আমি যে কোন্ জাতের, দামিনী তাহা বুঝিয়া লইয়াছে। যাক, দলে টানিল এই আমার সুখ।

 শচীশকে গিয়া বৃলিলাম, “বেশ তো, শহরে এখনই নাই গেলাম। নদীর ধারে ঐ-যে পোড়ো বাড়ি আছে ওখানে কিছুদিন কাটানো যাক। বাড়িটাতে ভূতের উৎপাত আছে বলিয়া গুজব, অতএব মানুষের উৎপাত ঘটিবে না।”

 শচীশ বলিল, “আর তোমরা?”

 আমি বলিলাম, “আমরা ভূতের মতোই যতটা পারি গা-ঢাকা দিয়া থাকিব।”

 শচীশ দামিনীর মুখের দিকে একবার চাহিল। সে চাহনিতে হয়তো একটু ভয় ছিল।