পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীবিলাস
৯৫

 আমি একদিন আর থাকিতে পারিলাম না, বলিলাম, “দেখো শচীশ, আমার বোধ হয় তোমার একজন কোনো গুরুর দরকার, যার উপরে ভর করিয়া তোমার সাধনা সহজ হইবে।”

 শচীশ বিরক্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, “চুপ করে বিশ্রী, চুপ করো— সহজকে কিসের দরকার। ফাঁকিই সহজ, সত্য কঠিন।”

 আমি ভয়ে ভয়ে বলিলাম, “সত্যকে পাইবার জন্যই তো পথ দেখাইবার—”

 শচীশ অধীর হইয়া বলিল, “ওগো, এ তোমার ভূগোলবিবরণের সত্য নয়— আমার অন্তর্যামী কেবল আমার পথ দিয়াই আনাগোনা করেন, গুরুর পথ গুরুর আঙিনাতেই যাওয়ার পথ।”

 এই এক শচীশের মুখ দিয়া কতবার যে কত উলটা কথাই শোনা গেল1 আমি শ্রীবিলাস, জ্যাঠামশায়ের চেলা বটে, কিন্তু তাঁকে গুরু বলিলে তিনি আমাকে চেলাকাঠ লইয়া মারিতে আসিতেন — সেই আমাকে দিয়া শচীশ গুরুর পা টিপাইয়া লইল, আবার দুদিন না যাইতেই সেই আমাকেই এই বক্তৃতা। আমার হাসিতে সাহস হইল না, গম্ভীর হইয়া রহিলাম।

 শচীশ বলিল, “আজ আমি স্পষ্ট বুঝিয়াছি, ‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ’ কথাটার অর্থ কী। আর-সব জিনিস পরের হাত হইতে লওয়া যায়, কিন্তু ধর্ম যদি নিজের না হয় তবে তাহা মারে, বাঁচায় না। আমার ভগবান অন্যের হাতের