পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
চতুরঙ্গ

নাচাইয়া সাদা-কালো ডানার ঝলক দিতেছে। কিছু দূরে চখাচধীর দল ভারি গোলমাল করিতে করিতে কিছুতেই পিঠের পালক পুরাপুরি মনের মতো সাফ করিয়া উঠিতে পড়িতেছে না। দামিনী পাড়ির উপর দাঁড়াইতেই তারা ডাকিতে ডাকিতে ডানা মেলিয়া উড়িয়া চলিয়া গেল।

 দামিনীকে দেখিয়া শচীশ বলিয়া উঠিল, “এখানে কেন।”

 দামিনী বলিল, “খাবার আনিয়াছি।”

 শচীশ বলিল, “খাইব না।”

 দামিনী বলিল, “অনেক বেলা হইয়া গেছে।”

 শচীশ কেবল বলিল, “না।”

 দামিনী বলিল, “আমি নাহয় একটু বসি, তুমি আর-একটু পরে—”

 শচীশ বলিয়া উঠিল, “আহা কেন আমাকে তুমি—”

 হঠাৎ দামিনীর মুখ দেখিয়া সে থামিয়া গেল। দামিনী আর কিছু বলিল না, থালা হাতে করিয়া উঠিয়া চলিয়া গেল। চারি দিকে শূন্য বালি রাত্রিবেলাকার বাঘের চোখের মতো ঝক্ঝক্ করিতে লাগিল।

 দামিনীর চোখে আগুন যত সহজে জ্বলে, জল তত সহজে পড়ে না। কিন্তু, সেদিন যখন তাকে দেখিলাম, দেখি সে মাটিতে পা ছড়াইয়া বসিয়া, চোখ দিয়া জল পড়িতেছে। আমাকে দেখিয়া তার কান্না যেন বাঁধ ভাঙিয়া ছুটিয়া পড়িল। আমার বুকের ভিতরটা কেমন করিতে লাগিল। আমি এক পাশে বসিলাম।