পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীবিলাস
৯৯

 একটু সে সুস্থ হইলে আমি তাকে বলিলাম, “শচীশের শরীরের জন্য তুমি এত ভাব কেন?”

 দামিনী বলিল, “আর কিসের জন্য আমি ভাবিতে পারি বলল। আর-সব ভাবনা তত উনি আপনিই ভাবিতেছেন। আমি কি তার কিছু বুঝি, না, আমি তার কিছু করিতে পারি?”

 আমি বলিলাম, “দেখো, মানুষের মন যখন অত্যন্ত জোরে কিছু একটাতে গিয়া ঠেকে তখন আপনিই তার শরীরের সমস্ত প্রয়োজন কমিয়া যায়। সেইজন্যেই বড় দুঃখে কিম্বা বড়ো আনন্দে মানুষের ক্ষুধাতৃষ্ণা থাকে না। এখন শচীশের যেরকম মনের অবস্থা তে ওর শরীরের দিকে যদি মন না দাও, ওর ক্ষতি হইবে না।”

 দামিনী বলিল, “আমি যে স্ত্রীজাত— ঐ শরীরটাকেই তো দেহ দিয়া, প্রাণ দিয়া, গড়িয়া তোলা আমাদের স্বধর্ম। ও যে একেবারে মেয়েদের নিজের কীর্তি। তাই যখন দেখি শরীরটা কষ্ট পাইতেছে তখন এত সহজে আমাদের মন কাঁদিয়া উঠে।”

 আমি বলিলাম, “তাই যারা কেবল মন লইয়া থাকে শরীরের অভিভাবক তোমাদের তারা চোখেই দেখিতে পায় না।”

 দামিনী দৃপ্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, “পায় না বৈকি। তারা আবার এমন করিয়া দেখে যে, সে একটা অনাসৃষ্টি।”

 মনে মনে বলিলাম, সেই অনাসৃষ্টিটার ’পরে তোমাদের লোভের সীমা নাই।— ওরে ও শ্রীবিলাস, জন্মান্তরে যেন সৃষ্টিছাড়ার দলে জন্ম নিতে পারিস এমন পুণ্য কর।