পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোণ U8 এই নির্বিকার ঔদার্য যেন জীবনের সেরা সম্পদ, কুড়াইয়া পাইয়াছে। দূর হইতে দিনের পর দিন শুধু চাহিয়া দেখিতে দেখিতে হঠাৎ একদিন ধনীর দুলালের খেলনাটি বস্তিবাসী শিশুর হাতে আসিলে সে যেমন আনন্দে পাগল হইয়া ভাবে, জীবনে তার পাওয়ার আর কিছুই বাকি নাই, আৰ্য শান্তি আহরণের সৌভাগ্যে বিপরীত আনন্দের উন্মাদনায় রাজকুমারেরও তেমনি মনে হইতে থাকে, এবার সে তৃপ্তি পাইয়াছে, সম্মুখে তার পরিতৃপ্ত জীবন। সকলে জিজ্ঞাসা করে---কি হয়েছে রাজু ? ডাবি জিতেছি ? -একে জিতেছি। রাজকুমার দেখাইয়া দেয় নিজেকে, কখনো বুকের ডাইনে কখনাে বঁীয়ে আঙুল ঠেকাইয়া। যে কাছে আসে। সেই পরিবর্তন লক্ষ্য করে, নদীতে জোয়ার আসার মত এত স্পষ্টভাবে সে জীবন্ত হইয়া উঠিয়াছে। মনোরমা বিস্মিত হয়, আশা করিবে কি হতাশ হইবে ভাবিয়া পায় না। আশা ভঙ্গের ভয়টাই হয় বেশী। কালীর জন্য যদি বদলাইয়া গিয়া থাকে রাজকুমার, তাকে কিছু না বলিয়াই কি বদলাইত ? এখন শুধু এইটুকু আশা করা চলে যে তাকে কিছু না বলিলেও কালীর সঙ্গে হয়তো তার কোন কথা হইয়াছে, হয়তো অন্য কিছু ঘটিয়াছে। অন্য কিছু কি আর ঘটবে, হয়তো কালীকে একটু আদর করিয়াছে রাজকুমার এবং কি করিবে না করিবে সিদ্ধান্ত করিয়া ফেলিয়া সুখী হইয়াছে। এবার সময়মত একদিন তার কাছে কথাটা পাড়িবে। মনে মনে মনোরম। কিন্তু মাথা নাড়ে। রাজকুমারের খুশী হওয়া যেন সে রকম নয়। সে শান্তই ছিল চিরদিন, আরও শান্ত হইয়াছে, শুধু চোখেমুখে ফুটিয়াছে জ্যোতি, কথা ও ব্যবহার হইয়াছে নিৰ্ভয় নিশ্চিন্ত, সুখী মানুষের আনন্দময় সহজ আত্মপ্রকাশ। একটু তো উত্তেজনা থাকা উচিত ছিল আনন্দে, কালীকে চায় কি চায় না। এ সমস্যার মীমাংসা যদি তার হইয়া গিয়া থাকে, শুরু। যদি হইয়া থাকে কালীকে পাওয়ার দিন গোনা ? কালীকে সে জিজ্ঞাসা করে, হঁ্যারে কালী, কি হয়েছে রে ?