পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV) চতুষ্কোণ রাজকুমার বলে,—ঘুরিয়ে বলেও বোঝাতে পারব না। সরসী। যদি বলি, ভেতর থেকে জুড়িয়ে যেন ঠাণ্ড হয়ে যাচ্ছি, ঠিক বলা হবে না। যদি বলি, বহুকাল থেকে আমি যেন ধীরে ধীরে সুইসাইড করে আসছি, তাও ঠিক বলা হবে না। আমার এই কথাগুলি কি ভাবে নিতে হবে জানো ? গন্ধ বোঝাবার জন্য তোমায় যেন ফুল দেখাচ্ছি। —কি ভাব তুমি ? মোটা কথায় তাই আমাকে বলে। --কি ভাবি ? ভাবি যে আমি এমন সৃষ্টিছাড়া কেন। কারো সঙ্গে আমার বনে না, সহজ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না। অন্য সবাইকে দেখি, খুব যার সঙ্কীর্ণ জীবন, তারও কয়েকজনের সঙ্গে সাধারণ সহজ সম্পর্ক আছে, আত্মীয়তার, বন্ধুত্বের, ঘুণা বিদ্বেষের সম্পর্ক । কারো সঙ্গে আমার সে যোগাযোগ নেই। কি যেন বিকার আমার মধ্যে আছে সরাসী, আর দশজন স্বাভাবিক মানুষ যে জগতে সুখে বিচরণ করে আমি সেখানে নিজের ঠাই খুজে নিতে পারি না। আমার যেন সব খাপছাড়া, উদ্ভট । নাড়ী দেখব বলে আমি গিরির সঙ্গে কেলেঙ্কারি করি, শুধু খেয়ালের বসে রিনি মুখ বাড়িয়ে দিলে আমার কাছে সেটা বিরাট 'এক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, সৌন্দর্যর ৰদলে মেয়েদের দেহে আমি খুজি আমার থিয়োরীর সমর্থন। আমার যেন সব বঁকা, সব জটিল। বুঝতে পার না। সরসী তোমাদের সঙ্গেও আমার যোগাযোগটা কিরকম ? তুমি কখনো আমার বিচার করে। না, শুধু আমায় বুঝবার চেষ্টা কর, তোমার সঙ্গে তাই প্ৰাণ খুলে কথা বলি। শুধু ওইটুকু সম্পর্ক তোমার সঙ্গে আমার। আমার সঙ্গে শুধু আমার কথা তুমি বলবে, তোমার যেন আর কােজ নেই। তোমার সম্বন্ধে কিছু জানিবার কৌতুহল কোনদিন দেখেছি আমার ? তোমার সুখ দুঃখের ভাগ নেবার আগ্রহ দেখেছি কখনো ? আমার প্রয়োজনে আমার জন্য তুমি একদিন আশ্চৰ্য সাহস আর উদারতা দেখালে, তাই জানতে পারলাম তোমার দেহ মন কত সুন্দর। কিন্তু কৃতজ্ঞতা কই আমার ?