পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চকুকোণ O না, সাহসও পায় না। এ সময় বাজে কথায় রাজকুমার বড় বিরক্ত হয়। একদিন স্বভাব দোষে অতি হালকা আর অতি সূক্ষ্ম একটা খোঁচা দেওয়া রসিকতা করিয়া বসায় রাগ করিয়া রাজকুমার তিন দিন তাকে পড়াইতে আসে নাই। পড়ানোর জন্য রাজকুমার বেতন পায়, তবু বৃষ্টি না নামিলে হয়তো রাজকুমার মালতীকে আজ পড়াইতে আসিত না । বিশ্বজগতের সম্রাট আজ আর সে নয়, সন্ধ্যার আগে বৃষ্টি আসার সময় পৰ্যন্ত সে যা ছিল। মানুষের মনের এটা কি জটিল রাজনীতির ব্যাপার কে জানে, সারাদিনের অবিরাম বর্ষণ হঠাৎ থামিয়া যাওয়াকে উপলক্ষ করিয়াই এক মুহুর্তে রাজা ভিখারী হইয়া যায়। বেশ ছিল সে সারাদিন। সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখিয়াছিল, রোদ নাই, জমাট বাঁধা কালো মেঘের গভীর ছায়া নামিয়াছে। কি যে তৃপ্তি বোধ হইয়াছিল রাজকুমারের। তারপর বৃষ্টি নামিতে জাগিয়াছিল উল্লাস, জীবনে ফাঁকি ছিল না, অপুর্ণতা ছিল না, নিজের ঘরটিতে বন্দী হইয়া থাকিয়াও মনে হইয়াছিল বাহিরের যে জগৎ জলে ভাসিয়া যাইতেছে তার সঙ্গে তার সম্পর্ক কিসের ? ঘরে বন্দী থাক দেহ, কোটি বছর অমনি তৃপ্তি আর আনন্দের সঙ্গে মন রাজত্ব করুক নিজের রাজ্যে । তারপর বৃষ্টি থামিয়া গেল। মেঘের ওপারেও তখন রোদ নাই । মেঘের ছায়া ধীরে ধীরে ঢাকিয়া যাইতেছে গাঢ়তর রাত্রির ছায়ায় । তখন মনে হইয়াছিল, বৃষ্টি যখন নাই, এবার বাহির হওয়া যাইতে পারেবাড়ির বাহিরে যে জগতে গিরি, রিনি, সরসী আর মালতী বাস করে সেই জগতে । কিন্তু এই বাদল দিনের শেষে বাড়ি ছাড়িয়া বাহির হওয়া যায়, পথে পথে ঘুরিয়া বেড়ানো যায় যত খুশী, ওদের কারো বাড়ি যাওয়ার অজুহাত তো তার নাই ! যার কাছেই যাক, সে ভাবিবে ভিখারী আসিয়াছে : রাজাকে ভিখারী সাজিয়া আসিতে দেখিয়া শুধু কথা ও হাসি ভিক্ষা দিতেই কত সে কার্পণ্য করিবে কে জানে !