পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুকোণ Gy কাড়তে জন্মেছে । কি দিয়ে এমন মায়া জাগায় ছুড়ি ভগবান জানেন। ডাইনী এসে জন্মায়নি তো মানুষের পেটে ? ক’দিনের জন্যে তো এসেছে, সেখানে পাড়াসুদ্ধ সবাই অস্থির, রোজ সবাই জিজ্ঞেস করে, কালী কবে ফিরবে গো কালীর মা ? যদুবাবু মস্ত বড়লোক ওখানকার, ংশ একটু নীচু, তার গিয়ী মাসীকে এখন থেকে সাধাসাধি করছে, ছেলে বিলেত থেকে ফিরলে কালীকে আমায় দিও কালীর মা । —তবে তো কালীর বিয়ের জন্য কোন ভাবনাই নেই। -কে ভাবে ওর বিয়ের জন্য ? মনোরমার কাছে এসব শোনে আর কালীকে রাজকুমার একটু মনোেযাগের সঙ্গে লক্ষ্য করে । তার মনে হয়, কেবল কথাবার্তা চালচলন শিক্ষা-দীক্ষার দিক হইতে নয়, কালীর গড়নটি পর্যন্ত যেন ঘরোয়া ছাঁচের, বহুকাল আগে মিসেস বেলনসের আঁকা। গত শতাব্দীর বাঙালী নারীর ছবির আদর্শে কালীর দেহ গড়িয়া উঠিতেছে। এরকম মনে হয় কেন ? সাজ পোশাকের এমন কোন নূতনত্ব তো কালীর নাই যে জন্য এরকম একটা ধারণা জন্মিতে পারে। সাধারণ বাঙালী সংসারের আর দশটি মেয়ের মতই তার সাধারণ বেশভুষা। অন্য কোন মেয়েকে দেখিয়া তো আজ পর্যন্ত তার মনে হয় নাই, দেয়াল আর ঘোমটার আড়ালে শুধু একজনের দৃষ্টিকে বিহবল করাৱ জন্য তার রূপযৌৰন, দেহটি শুধু তার সেবা। আর গৃহকর্মের উপযোগী ? রিনি, সরসী আর মালতীর সঙ্গে, আত্মীয় এবং বন্ধু পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে, কালীকে মিলাইয়া দেখিয়া রাজকুমার রহস্যভেদের চেষ্টা করে। ট্রামে বাসে ঘোমটা-টানা ঘোমটা-খোলা বেী আর স্কুল কলেজের মেয়ে উঠলে তাদের সঙ্গেও মনে মনে কালীকে মিলাইয়া দেখিতে তার ইচ্ছা হয় । নিজের এক অলস কল্পনার ভিত্তি খুজিয়া বাহির করিতে গিয়া এমন এক বিস্ময়কর সত্য প্ৰথম আবিষ্কারের অস্পষ্টতায় আবৃত হইয়া তার মনে উকি দিতে থাকে যে রাজকুমার অভিভূত হইয়া পড়ে।